আজব পৃথিবী

Wednesday, July 9, 2014

অনিন্দ্য সুন্দর শহরগুলী

রোম, ইটালি : রোমের রাস্তায় হাঁটার অর্থ হচ্ছে এক কথায় ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যাওয়া। পৃথিবীর আর কোন শহরে ইতিহাস, আধুনিকতা ও এত দারুণ খাবারের সমন্বয় আছে কিনা সন্দেহ!
প্যারিস,ফ্রান্স : "আলোর শহর" হিসাবে সুপরিচিত এই শহরে আসলে জীবনে একবার না গেলেই নয়। একে সিটি অফ লাভও বলা হয়ে থাকে। পৃথিবীর বুকে প্যারিস আজও সবচাইতে রোমান্টিক শহর রূপেই পরিচিত। এই শহরের শ্বাসরুদ্ধকর সব মিউজিয়াম ও দারুণ প্রাণবন্ত ক্যাফেগুলো আপনাকে আকর্ষণ করবেই!
ভেনিস, ইতালি : পানির ওপরের রাজত্ব দেখার জন্য পুরো বিশ্বের টুরিস্ট চলে যান ইতালির ভেনিসে। শুধু তাই নয় এই শহরের বাড়িঘরগুলোর সৌন্দর্যও অনেক বেশি আকর্ষণীয়। না দেখলে যেন আসলেই জীবন বৃথা।
নিউ ইয়র্ক সিটি, ইউএসএ : নিউ ইয়র্ক শহরের মতো এতো রঙিন এবং নানা ধরণের শিল্প-সংস্কৃতি, সাহিত্য এবং মানুষের ছড়াছড়ি অন্য কোনো শহরে নেই। আর তাই একটিবার হলেও নিউ ইয়র্ক সিটি দেখে আসা উচিৎ।
কয়টো, জাপান : অদ্ভুত সুন্দর এই শহরটি আপনাকে নিয়ে যাবে ভিন্ন এক জগতে। এর বাগান ও পার্ক, সম্ভ্রান্ত টি হাউজ ও দুর্গ গুলো আপনাকে দেবে রাজকীয় ও প্রাচীন জাপানের অনুভব।
পেট্রা, জর্ডান : বিশ্বের প্রাচীন শহর হিসেবে পরিচিত এই শহরটি প্রত্নতত্ত্বে আগ্রহী সকল টুরিস্টদের জন্য বেশ আকর্ষণীয়।
মারাকেস, মরক্কো : অসাধারন স্থাপত্যশিল্পের শহর হিসেবে সকলের কাছেই বেশ আকর্ষণীয় মরক্কোর এই শহরটি।
লন্ডন, ইংল্যান্ড : অনেক বিখ্যাত যাদুঘর, মার্কেট এবং তাদের সংস্কৃতির বৈচিত্র্যময়তা দেখতে হলেও অন্তত একটিবার লন্ডন ঘুরে আসা উচিৎ।
রিও ডি জেনিরো, ব্রাজিল : অনেক বেশি রঙিন এবং রঙের সমাহার দেখা যায় ব্রাজিলের সকল কার্নিভ্যালে। যা জীবনে একটি বার হলেও দেখা উচিৎ।
লাসা, চীনা : আধ্যাত্মিক সৌন্দর্যের শহর এই লাসায় রয়েছে সব চাইতে বড় বুদ্ধের মন্দির। এর স্পিরিচ্যুয়াল আকর্ষণ সকল টুরিস্টকেই টানে।

ভয়ংকর বিষধর পাখি

পাখিকে ভয় পাবার প্রশ্নই ওঠে না। তাদের বুদ্ধিমত্তা বা শক্তিমত্তার কারণে নয়, মানুষ তাদের সমীহ করে বিষের ভয়েই। পাখি সৌন্দর্য আর শান্তির প্রতিক। কাক, পেঁচা আর শকুন জাতীয় পাখি ছাড়া অধিকাংশ পাখিকেই মানুষ পছন্দ করে। কিন্তু যদি পাখির বিষ থাকত! তাহলে ওর মতো ভয়ংকর প্রাণী হয়তো দ্বিতীয়টা আর মিলত না পৃথিবীতে। কারণ বিষের সাথে খানিকটা বুদ্ধি আর উড়তে পারার দক্ষতার মিশলে বিভীষিকার আরেক নাম হয়ে উঠত পাখি। কিন্তু আদৌ কি কোনো বিষাক্ত পাখি আছে? আটপৌরের বাঙালিয়ানা জীবন-যাপনে অভ্যস্ত সেসব মানুষ তো বটেই, পৃথিবীর কজন মানুষ জানে বিষাক্ত পাখিও রয়েছে আমাদের এই চেনা জগতে?কিন্তু শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি যে পৃথিবীর তিন প্রজাতির পাখি নিজেদের শরীরে বিষ বহন করে। অন্তত Extrime Bird নামের একটি পাখি গবষণা বিষয়ক সংস্থা তাদের ওয়েব সাইটে জানাচ্ছে সেকথা।১৯৮৯ সালে জ্যাক ডামবাখার নামের এক জীব বিজ্ঞানী পাপুয়া নিউগিনিতে সর্বপ্রথম পাখির বিষধর স্বত্ত্বা আবিষ্কার করেন। সেই পাখিটির নাম হুডেড পিটোহুই (Hooded Pitohui)। এখনোও পর্যন্ত প্রাপ্ত তিন প্রজাতির বিষধর পাখিদের মধ্যে এদের বিষই সবচেয়ে বেশি। হুডেড পিটোহুই এর বিষ কিন্তু খুব বেশি তীব্র নয়। সাধারণ ইঁদুর মারা বিষের সমান। পাখিদের তো দাঁত নেই, তাহলে কোথায় থাকে তাদের বিষ। হুডেড পিটোহুই ঠোঁট ও নখর তো বিষাক্তই, সেই সাথে এদের প্রত্যেক পালকের গোড়ায় গোড়ায় থাকে বিষ। ধারণা করা হয় Choresine নামের পোকা হুডেড পিটোহুইদের প্রিয় খাদ্য; তাদের মাধ্যমেই এরা বিষাক্ত হয়ে ওঠে। হুডেড পিটোহুই বৈজ্ঞানিক নাম Pitohui dichrous. এমন নয় যে এই পাখিরা হুট করেই বিষাক্ত হয়ে গেছে। বরং শত শত বছর ধরেই এরা বিষধর বৈশিষ্ট্য নিজেদের ভেতর লালন করে আসছে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের চোখ এড়িয়ে গেছে এটাই আশ্চর্যের বিষয়।

আকর্ষনীয় গিরিখাত

ইয়ানো গিরিখাত,কারিজিনি ন্যাশনাল পার্ক,অস্ট্রোলিয়া : এই গিরিখাতটি পশ্চিম অস্ট্রোলিয়ায় অবস্থিত। গিরিখাতটি সুউচ্চ শিলা পাথরের দেয়াল দ্বারা গঠিত। অভিজ্ঞ পর্যটকদের জন্য এই গিরিখাতটি বেশ উপভোগ্য।

সিনাই গিরিখাত,মিশর : এই গিরিখাতটির দেয়াল অনেক লম্বা। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে মহাসাগর থেকে বায়ু ও জলের পলল দ্বারা এই গিরিখাতটি গঠিত বলে ধারনা করা হয়। এটির উচ্চতা প্রায় ১০০ ফুট। কখনো কখনো এটি কয়েকফুট পর্যন্ত চওড়া হয়। এই গিরিখাতে চড়া অন্যান্য গিরিখাতের চেয়ে অনেক সহজ।

ক্যাথিড্রাল জর্জ,পুরনুলুলু ন্যাশনাল পার্ক,অস্ট্রলিয়া : এই চিত্তাকর্ষ গিরিখাতটি অস্ট্রোলিয়ার ব্লু পর্বতমালার পরিসীমায় অবস্থিত। এই বিশ্ব ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচিত। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বায়ু এবং জলে বেলে পাথরে প্রবাহিত হয়ে এই গিরিখাতটি গঠিত বলে মনে করা হয়।

আনটিলৌপ গিরিখাত,অ্যারিজোনা : পৃথিবীর সুন্দরতম গিরিখাত বলে মনে করা হয় এই গিরিখাতকে। যেটা আমেরিকার দক্ষিণে অ্যারিজোনার নাভোজোতে অবস্থিত। এই গিরিখাতের দুইটি ভাগ আছে। এক উপরের গিরিখাত এবং নিচের গিরিখাত। উপর থেকে ধেয়ে আসা বন্যায় বেলে পাথর ক্ষয়ে এই সুন্দর ও নান্দনিক গিরিগাত গঠিত। অদ্ভুত কৌণিক দেয়াল আছে। বাহারী রং, গঠন, রেখাচিত্র এবং দর্শনীয় সব দৃশ্য আছে যা একজন আলোকচিত্রীকে সহজেই আকর্ষণ করে। গ্রীষ্মকালে এর সৌন্দর্য বহুগুনে বেড়ে যায়।

সিক গিরিখাত,পেত্রা,জর্ডান : জর্দানের পেত্রা শহরের প্রধান প্রবেশপথে এই গভীর খাদ অবস্থিত। এই গিরিখাতের দেয়াল কালো। এই গিরিখাতের তিন চতুর্থাংশ পথ সংকীর্ণ। কখনো কখনো এই গিরিখাত ৮-৯ ফুটের বেশী চওড়া হয় এবং আর এই গিরিখাতের দেয়ালের উচ্চতা প্রায় ৩০০-৬০০ ফুট। এই গিরিখাত জলের ক্ষয় দ্বারা গঠিত।

ওয়েভ গিরিখাত , অ্যারিজোনা : এই নান্দনিক গিরিখাতটিও আমেরিকার অ্যারিজোনায় অবস্থিত। ওয়েভ এর নিচে শুধুমাত্র ৭ ফুট চওড়া। তবে এটি ৫২ ফুটেরও বেশি গভীর এবং উপরে ৬২ ফুট চওড়া। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই গিরিখাতটি পর্যকটদের সব সময়ই আকর্ষণ করে থাকে। ভূ-বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে বলেছেন যে জায়গাটা ১৯০ মিলিয়ন বা ১৯ কোটি বছরের পুরোনো। জায়গাটা বালিপাথর বা স্যান্ডস্টোনে তৈরি। এই পাথর সহজেই ক্ষয়ে যায় মানুষের পায়ের চাপ লেগে। অ্যারিজোনা সরকার তাই ওয়েভে যেতে একদিনে কুড়ি জনের বেশি পর্যটককে অনুমতি দেয়না। আগে থেকে অনুমতির জন্য আবেদন করতে হয়। কুড়িজনের বেশি লোক হলেই লটারিতে ঠিক হয় কে যেতে পারবে।

ব্যাকস্কিন গিরিখাত,ওটেহ : এই গিরিখাতটি আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিমে ওটেহতে অবস্থিত। এটিই খুব সম্ভবত পৃথিবীর দীর্ঘতম গিরিখাত। এই গিরিখাতের দুই পাশ প্রায় ৫০০ ফুট উচু। এর তলদেশ দিয়ে পারিয়া নদী বয়ে গেছে।

উইচেজ গিরিখাত, উইসকনসিন,আমেরিকা : এই গিরিখাতটি লাল এবং সোনালী রঙয়ের বেলে পাথর দ্বারা গঠিত। তবে দেয়ালের অনেক জায়গায় পান্নার রঙ দেখা যায়। এই গিরিখাতটি খুবই সংকীর্ণ এবং শৈবাল পরিহিত। যার ফলে পর্যটকদের জন্যে এই গিরিখাতে ওঠা মোটেও সুখকর হয় না। আলোকচিত্রী এইচ,এইচ ব্যানেট ১৮৭১ সালে সর্বপ্রথম এই গিরিখাতটি আবিষ্কার করেন।

জ্যিয়ন ন্যাশনাল পার্ক : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই সংগ্রহশালাটি দক্ষিন আমেরিকার ওটেহ’তে অবস্থিত। এই ন্যাশনাল পার্কটি ২২৯ বর্গ মাইল জুড়ে অবস্থিত। আর এই গিরিখাতটি ১৫ মাইল দীর্ঘ। নর্থ ফর্গের কোল ঘেষে ভার্জিন নদীর উপকূলে এই গিরিখাতটি বেয়ে গেছে।

Monday, July 7, 2014

মহাসাগরে সৌন্দর্যদীপ্ত ভাসমান মসজিদ !

মহাসাগরে ভাসমান মসজিদটি মরক্কোসহ আফ্রিকার সবচেয়ে বড় মসজিদ। মসজিদটির অভ্যন্তরে ২৫ হাজারসহ একসাথে লক্ষাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। নারীদের জন্য রয়েছে আলাদা নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা। বৃষ্টির সময় ছাড়া প্রাকৃতিক আলো ও মুক্ত বাতাস প্রবেশ করতে মসজিদটির ছাদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যায় তিন মিনিট পরপর।২২ দশমিক ২৪ একর জায়গার ওপর অবস্থিত এ মসজিদের মূল ভবনের সাথেই আছে লাইব্রেরি, কুরআন শিক্ষালয়, ওজুখানা ও কনফারেন্স রুম। আড়াই হাজার পিলারের ওপর স্থাপিত এ মসজিদের ভেতরের পুরোটাই টাইলস বসানো। মসজিদ এলাকার আশপাশ সাজানো হয়েছে ১২৪টি ঝরনা ও ৫০টি ক্রিস্টালের ঝাড়বাতি দিয়ে। শুধু তাই নয়, কোথাও কোথাও এসব মোড়ানো হয়েছে স্বর্ণের পাত দিয়ে।

মসজিদটির মেঝে থেকে ছাদের উচ্চতা ৬৫ মিটার। মেহরাবের উচ্চতা দুইতলা ভবনের সমান। আর মিনারের উচ্চতা ২১০ মিটার বা ৬৮৯ ফুট। ৬০ তলা ভবনের সমান এই মিনারের ওপরে রয়েছে লেজার রশ্মি, যা নাবিকদের দেখিয়ে দেয় পবিত্র কাবাশরিফের পথ।দূর থেকে মনে হবে পানির ওপর ভাসছে মসজিদটি। মুসল্লিরা নামাজ পড়ছেন পানির ওপর। ঢেউয়ের তালে তালে দোল খাচ্ছে মসজিদটি। সাথে মুসুল্লিরাও দুলছেন। এমনই একটি মসজিদ আছে মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কায়। নাম দ্বিতীয় হাসান মসজিদ বা গ্র্যান্ড মস্ক হাসান-২।মরক্কোর বাদশাহ দ্বিতীয় হাসান মসজিদটি তৈরি করেছেন। নির্মাণ করেছেন ফরাসি কোম্পানি বয়গিসের প্রকৌশলীরা। আর নকশা করেছেন ফরাসি স্থপতি মিশেল পিনচিউ। একে ভাসমান মসজিদ বলার কারণ হচ্ছে- মসজিদটির তিন ভাগের এক ভাগ আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর অবস্থিত। দূরের কোনো জাহাজ থেকে দেখলে মনে হয়, ঢেউয়ের বুকে যেন মসজিদটি দুলছে আর মুসল্লিরা যেন নামাজ পড়ছেন পানির ওপর।৩০ কিলোমিটার দূর থেকেও স্পষ্ট দেখা যায় এই লেজার রশ্মি। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মিনার এটি। ১০ মিটার বা ৩৩ ফুট উচ্চতার সামুদ্রিক ঢেউ ভেঙে দেয়ার ব্যবস্থা আছে মসজিটিতে। সমুদ্রের কোনো গর্জন শোনা যাবে না মসজিদটির ভেতর থেকে। মসজিদ এলাকার বাগানে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বনভোজনেরও।

সাপের দ্বীপ !

ভাবুন, চারপাশে অথৈ পানি আর মাঝে শুধু জেগে আছে একটি দ্বীপ। অদ্ভুত সবুজ সে দ্বীপের গাছের পাতার রঙ। প্রকৃতি যেন এখনও সেখানে সেই গুহাবাসী মানুষের কালেই পড়ে আছে।ঘুরতে ঘুরতে সেই দ্বীপে না হয় আপনি চলেই গেলেন। ভাবলেন নগর জীবনের যন্ত্রণা থেকে বেশ খানিকটা রেহাই পাওয়া গেল শেষ পর্যন্ত। মন্দ কী? তারপর দেখলেন এ তো আর দশটা দ্বীপের মতো সাধারণ কোনো দ্বীপ নয়। এ তো রীতিমতো সাপেদের স্বর্গরাজ্য। তাও আবার ভয়ঙ্কর রকমের বিষধর সব সাপদের।ব্রাজিলের সাও পাওলোর উপকূলে রয়েছে সত্যিকার অর্থেই এমনই এক দ্বীপ। ওই দ্বীপে এমন এমন সব ভয়ঙ্কর সাপের বাস যে ব্রাজিল সরকার বাধ্য হয়ে দ্বীপটিতে সাধারণ মানুষের ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কারণ, দ্বীপটিতে আপনি যাবেন তো ঠিকই জীবন নিয়ে তবে ফেরার নিশ্চয়তা নেই।

চূড়ান্ত রকমের ভয়ঙ্কর এই দ্বীপটির নাম ইহা ডি কুইমাডা গ্র্যান্ডি। দ্বীপটিতে যে শুধু পৃথিবীর বিষধর সাপগুলোর প্রায় হাজার চারেকের মতো বাস তাই নয়, বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর সবচাইতে বিষধর সাপ গোল্ডেন ল্যান্সহেডেরও বাস এই দ্বীপটিতেই। গোল্ডেন ল্যান্সহেডকে এ দ্বীপটি ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় না।গোল্ডেন ল্যান্সহেডের বিষ এতটাই শক্তিশালী যে এই বিষ মানুষের শরীরে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর তা শরীরের মাংস পর্যন্ত গলিয়ে দিতে পারে। সাও পাওলো থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে এই নির্জন দ্বীপে কেউ যদি গোল্ডেন ল্যান্সহেডের দংশনের শিকার হয় তবে তার মৃত্যু প্রায় অনিবার্য। তবে ঠিক কীভাবে এই সাপগুলো এতটা বিষধর হয়ে উঠেছে তা একরকমের রহস্যই রয়ে গেছে।

এ তো গেল গোল্ডেন ল্যান্সহেডের কথা। এ দ্বীপের বাকি সাপগুলোও কিন্তু কম নয়। উড়ন্ত পাখি ধরে এরা দিব্যি খেয়ে ফেলতে পারে।ইহা ডি কুইমাডা গ্র্যান্ডির আয়তন ৪৩০ বর্গমিটার। দ্বীপটিতে ভ্রমণে ব্রাজিল সরকারের নিষেধাজ্ঞা তো রয়েছেই, মানুষ এমনিতেই পারতপক্ষে কুইমাডা গ্র্যান্ডি মুখী হয় না। তবে ওই দ্বীপের ভয়ঙ্কর সাপগুলো নিয়ে গবেষণা করেন এমন কিছু বিজ্ঞানীর দ্বীপটিতে ভ্রমণের অনুমতি রয়েছে। এছাড়া ব্রাজিলীয় নৌবাহিনীর সদস্যদেরও দ্বীপটিতে যেতে হয় প্রায়ই।ভয়ঙ্কর এ দ্বীপে ভ্রমণ যেন সাক্ষাত মৃত্যুদূতের মুখোমুখীই হওয়া। তারপরও গোল্ডেন ল্যান্সহেড শিকারের আশায় এ দ্বীপটিতে চোরাকারবারীরা প্রায় ঢুঁ মারেন বলেও ধারণা করা হয়। আর কালোবাজারে একটি গোল্ডেন ল্যান্সহেড এরা ২৩ লাখ টাকারও বেশি দামে বিক্রি করেন।

গোল্ডেন ল্যান্সহেডের এতটা বিষধর হয়ে ওঠা নিয়ে যে তত্ত্বগুলো প্রচলিত রয়েছে তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্যটির মতে- আজ থেকে প্রায় ১১ হাজার বছর আগে সাগরের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ব্রাজিলের মূল ভূখণ্ড থেকে পৃথক হয়ে যায় ইহা ডি কুইমাডা গ্র্যান্ডি। এতে এই দ্বীপের সাপগুলো একরকমের খাদ্য সঙ্কটে পড়ে। খাবার হিসেবে তাদের হাতের কাছে থেকে যায় সামান্য কিছু অতিথি পাখি।কিন্তু এক্ষেত্রে সমস্যা ছিল এই বিষ কাজ করতে কখনো কখনো কয়েক দিনও লেগে যেত। ফলে দেখা যেত শিকারের উদ্দেশ্যে এই দ্বীপের সাপগুলো যেসব পাখিকে দংশন করতো সেগুলো মারা যেত অনেক দূরে যেয়ে, কখনো কখনো কয়েকদিন পরও। আর এ সমস্যার কারণে দ্বীপের সাপগুলোর কালের বিবর্তনে নিজেদের এমন বিষধরে সাপে বিকশিত করে ফেলে যা দংশনের কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই শিকারের প্রাণনাশে সক্ষম।বর্তমানে গোল্ডেন ল্যান্সহেডের বিষ অন্য বিষধর সাপগুলোর চেয়ে পাঁচগুণ বেশি শক্তিশালী। আর এর দংশনে মানুষের মৃত্যুর হার সাত শতাংশ।ভয়ঙ্কর এ দ্বীপটিকে ঘিরে ব্রাজিলজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে মুখরোচক নানা কেচ্ছা-কাহিনী।

সবচেয়ে নির্জন বাড়ি

আয়ারল্যান্ডের ছোট্ট একটি দ্বীপের নাম এলিওয়ি। দ্বীপের সবুজের মাঝে ছোট্ট একটি বাড়ি। একে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন ও নির্জন বাড়ি। বৃক্ষহীন এলাকা, উত্তাল বাতাস, সামুদ্রিক ঢেউ, জনমানবহীন এমন জায়গায় এটা আসলে একটি অস্থায়ী রিসোর্ট টাইপের বাড়ি। মূলত দীর্ঘ ঠোঁটের পাফিন পাখি শিকারিরা মৌসুমে এ বাড়িটি থাকার জন্য ব্যবহার করেন।কারণ পাফিন পাখির প্রজননের জন্য দ্বীপটি রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। একসময় এ জায়গায় পাফিন পাখি শিকার, পশু পালন ও মাছ ধরার কাজে বসবাস করত পাঁচটি সমৃদ্ধ পরিবার। প্রায় ৩০০ বছর আগে তারা ভাবতে থাকেন এই দ্বীপ পাখি শিকার ও পশুপালনের জন্য খবু একটা ভালো জায়গা না। সুতরাং, তারা সেখান থেকে অন্য জায়গায় সরতে শুরু করেন। কিন্তু পাফিন পাখি শিকারের জন্য এর চেয়ে ভালো স্থানও তারা আর এ পশ্চিমাঞ্চলে খুঁজে পেল না। সুতরাং, ১৯৫০ সালে এলিওয়ি হান্টিং অ্যাসোসিয়েশন ওই দ্বীপে অস্থায়ীভাবে থাকার জন্য একটি বড় বাড়ি তৈরি করল তাদের সদস্যদের জন্য। এটা শুধু পাফিন পাখি শিকারের জন্য। এখানে সুপেয় পানির উৎস নেই। তবে বৈজজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রকৃতি থেকেই সংগ্রহ করা হয় পানি। এখানে নেই বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ব্যবস্থা। কথা বলার জন্য যদি সঙ্গী না থাকে তবে পাখি আর প্রকৃতিই ভরসা।

আটলান্টিস" রহস্য

পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত সমাধান না হওয়া যত রহস্য আছে, তার মধ্যে অন্যতম হল এই আটলান্টিস। যিশুখ্রিস্টের জন্মের ৩৫৫ বছর আগে আটলান্টিসের কথা প্রথম জানিয়েছিলেন গ্রিক দার্শনিক প্লেটো। আজ থেকে প্রায় দশ-বারো হাজার বছর আগে আটলান্টিক মহাসাগরের কাছে অবস্থিত এই দেশটিতে নাকি ছিল অত্যন্ত উন্নত এক সভ্যতা। অনেকের বিশ্বাস, গ্রিক দ্বীপ ক্রিটের কাছাকাছি ছিল আটলান্টিস। শোনা যায়, বিজ্ঞানে প্রচণ্ড উন্নত ছিল আটলান্টিস। ইঞ্জিনিয়াররা ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ। তাদের তৈরি বন্দর, প্রাসাদ, মন্দির, খাল এবং জাহাজ তৈরি বা মেরামতির ব্যবস্থা ইত্যাদিতে ছিল অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়া। বিশেষ বিশেষ জায়গায় ঠাণ্ডা ও গরম জলের ঝরনার ব্যবস্থা ছিল।

প্লেটোর বয়ান অনুযায়ী এক ভয়ংকর ভূমিকম্প আর প্রবল জলোচ্ছ্বাসের ফলে এক রাতের মধ্যে আটলান্টিক মহাসাগরের নিচে তলিয়ে যায় এ শহর। আটলান্টিস রহস্য ভেদ করার জন্য বহু বছর আগে থেকেই পণ্ডিত ও গবেষকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে আটলান্টিস বলে কোনো দেশের আদৌ কোনো অস্তিত্ব ছিল না কোনোদিন। আবার অনেকে বিশ্বাস করেন সত্যিই পৃথিবীর বুকে একসময় ছিল অত্যন্ত উন্নত এই সভ্যতা। তবে আজ পর্যন্ত মেলেনি কোন তথ্য প্রমাণ।

তবে সম্প্রতি গবেষকেরা জানালেন একদম ভিন্ন একটি তথ্য! তাঁদের দাবী, হারানো আটলান্টিস খুঁজে পেয়েছেন তারা!

এই চাঞ্চল্যকর খবর দিয়েছেন আমেরিকার একটি রিসার্চ টিমের মুখ্য গবেষক, কানেকটিকাটের হার্টফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর রিচার্ড ফ্রিয়ান্ড। তারা নাকি জানতে পেরেছেন হারিয়ে যাওয়া আটলান্টিসের সন্ধান! তিনটি দেশের গবেষকদের একটি দল মাটি ভেদ করতে পারে এরকম অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে স্পেনের ‘দোনানিয়া ন্যাশনাল পার্ক’-এর মাটির নিচে খুঁজে পেয়েছেন ক্যানাল সিস্টেমের প্রমাণ। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি দেখে তাদের ধারণা হয়েছে, এই ন্যাশনাল পার্কের বিস্তীর্ণ জলাভূমির নিচে চাপা পড়ে আছে একটা আস্ত শহর, আর সেটা যে রহস্যে ঘেরা আটলান্টিসই, তাতে কোনো সন্দেহ নেই তাদের। স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে জার্মান পদার্থবিদ রাইনার কুন বলেছেন, যিশুখ্রিস্টের জন্মের ৮০০ থেকে ৫০০ বছর আগে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল এই শহর। ফ্রিয়ান্ড বলেছেন, গবেষণা চলছে এবং খুব শিগগিরই হারিয়ে যাওয়া এ শহরের অস্তিত্বের যাবতীয় প্রমাণ পেশ করবেন তারা।

সত্যিই কি সমাধান হতে চলেছে আটলান্টিস রহস্য? হারিয়ে যাওয়া গার্ডেন অফ ইডেনের ধ্বংসাবশেষ কি শেষ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যাবে? যদি সত্যিই প্রাচীন এ সভ্যতার অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়, তাহলে তা হবে মহেঞ্জোদারো, হরপ্পা, মিশর, ব্যাবিলন ইত্যাদির সভ্যতার চেয়ে অনেক পুরনো। আর তখন যে পৃথিবীর ইতিহাস আবার নতুন করে লিখতে হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।