গোটা বিশ্বের মানবজাতির ইতিহাসে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে যার নাম উঠে এসেছে তিনি হলেন পশ্চিম আফ্রিকার মালি সাম্রাজ্যের অধিপতি মানসা মুসা।তার সম্পদ এত বেশি ছিল যে তা সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না। তিনি অত্যন্ত দানশীল ব্যক্তিও ছিলেন। কথিত আছে, প্রতি জুমাবারে মুসা একটি করে মসজিদ তৈরি করতেন। বিশ্বের বড় বড় ধনী ব্যক্তি রয়েছেন। তাদের কারো কারো সম্পত্তির কোনো হিসাব-নিকাশ নেই। যেমন বিল গেটস, মুকেশ অম্বানি কিংবা সৌদি আরবের শেখরা। কিন্তু মানবজাতির ইতিহাসে সবসেচে ধনী কে ছিলেন তা খুঁজে বের করতে সম্প্রতি সমীক্ষা চালিয়েছিল একটি সংস্থা। Celebrity Net Worth নামের ওই সংস্থাটির সমীক্ষায় হিসাবটা এভাবে করা হয়েছে যে ১৯১৩ তে যদি সম্পত্তির পরিমাণ থাকে ১০০ মিলিয়ন ডলার, ২০১৩-এর হিসাবে সেটা হবে ২২৯৯.৬৩ বিলিয়ন ডলার।
এই হিসাবে দেখা গেছে ২৫ জন সর্বকালের ধনী ব্যক্তির মধ্যে ১৪ জনই আমেরিকান। আর এদের মধ্যে একমাত্র বিল গেটসই জীবিত। তিনিই সবচেয়ে ধনী আমেরিকান। তবে গোটা বিশ্বের ইতিহাসে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে যার নাম উঠে এসেছে তার তা অনেকেই শোনেননি। তিনি হলেন মানসা মুসা। পশ্চিম আফ্রিকার মালি সাম্রাজ্যের অধিপতি ছিলেন তিনি। মালি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সান্দিয়াতা কেইতার ভাগ্নে ছিলেন সম্রাট মানসা মুসা। ১৩০৭ সালে তিনি সিংহাসনে বসেন। তিনি প্রথম আফ্রিকান শাসক যিনি ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন। তার সম্পদ এত বেশি ছিল যে তা সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না। আনুমানিক ৪০০ বিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি ছিল তার।প্রচলিত আছে, ১৩২৪ সালে তিনি যখন হজ পালনের জন্য সৌদি আরব যান, তখন তার হজবহরের ৬০ হাজার লোক ছিল শুধু রসদপূর্ণ ব্যাগ বহনের জন্য। সঙ্গে ছিল ৫০০ গোলাম, যারা প্রত্যেকে একটি করে সোনার দণ্ড নিয়ে গিয়েছিল। ৮০ থেকে ১০০টি উট ছিল, যেগুলো প্রত্যেকটি প্রায় ১৪০ কেজি সোনা বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।
তার এই যাত্রাপথে তিনি প্রায় কয়েক শ’কোটি টাকা মূল্যের সোনা বিতরণ করেছিলেন। কায়রোতে তিনি এত বেশি সোনা বিতরণ করেছিলেন যে, বেশ কয়েক বছর ধরে সেখানে সোনার দাম অনেক কম ছিল। মুসার সফরে তার প্রথম স্ত্রী সঙ্গী হন। মুসার স্ত্রীর সেবায় ৫০০ দাসী নিযুক্ত ছিল। এই কাফেলায় বেশ কয়েকজন শিক্ষক, চিকিৎসক, সরকারি কর্মকর্তা ও সঙ্গীত শিল্পীও ছিলেন। মক্কায় হজের পর মক্কার জ্ঞান-বিজ্ঞানে অভিভূত হয়ে পড়েন তিনি। মক্কা থেকে উট বোঝাই করে চিকিৎসা, জোতির্বিদ্যা, দর্শন, ভুগোল, ইতিহাস, গণিতশাস্ত্র এবং আইনের ওপর প্রচুর বই নিয়ে আসেন। এবং মক্কা থেকে মেধাবী এবং সেরা গণিতবিদ, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আর্কিটেক্টদের আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসেন।
বলা হয়ে থাকে মুসা ওই ঐতিহাসিক হজে ১,৫০,০০০ পাউন্ড সোনা ব্যয় করেছিলেন। তিনি মালি সাম্রাজ্যের প্রায় ৪০০টি শহরকে আধুনিক করে গড়ে তোলেন। তার তৈরি স্থাপত্যের মধ্যে শংকর মাদ্রাসা বা ইউনিভার্সিটি অফ শংকর, হল অডিয়েন্স, গ্রান্ড প্যালেস উল্লেখযোগ্য। মুসার মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল, তা স্পষ্টভাবে জানা যায় না। তবে শোনা যায়, তিনি ২৫ বছর ধরে রাজত্ব করেছিলেন।