বৈচিত্রময় এই পৃথিবীকে যত জানি ততই অবাক হই। এই জানার শেষ নেই, শেষ নেই বিস্ময়েরও। ছাপোষা জীবন থেকে চোখ তুলে একটু শুধু দৃষ্টি প্রসারিত করতে হবে। বিস্ময়ের ভান্ডার আর সময় দেবে না মন খারাপের। সাদামাটা আপনিও হয়ে উঠবেন রোমাঞ্চপ্রিয়। অবাক হওয়ার নেশার চাইতে বড় নেশা হয়ত কিছু নেই!মানুষ সুউচ্চ পর্বতের চূড়ায় উঠে যায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। আবার কারও পছন্দ সমুদ্র। সে সার্ফিং করে, কায়াকিং করে, বিশ্বের বিভিন্ন বীচ থেকে ডাইভিং করে। কেন করে? এক পাহাড়ে উঠে কেন মেটে না স্বাদ? একই তো পাহাড়ী দৃশ্যগুলো সব! সমূদ্রের বীচগুলোও তো দেখতে একই। সেই নীল জল, সাদা বালির বীচ।সৌন্দর্য্যের নেশা একবার যাকে পেয়ে বসে সে জানে, প্রকৃতি কোথাও এক রকম নয় মোটেই। বরং প্রতি পদে পদে সে ভিন্ন। চূড়ায় চড়তে অনেক ঝুঁকি নিতে হয় সত্যি। কিন্তু একবার সেখানে পৌঁছে গেলে মন বলে, স্বর্গ বলে কিছু নেই। পৃথিবীই স্বর্গ, এই সৌন্দর্য্যই সর্বোচ্চ সৌন্দর্য্য!
বিস্ময়ের জাহাজে চড়ে আজ যাব এমন এক বীচে যাকে বলা হয় 'গোপন বীচ'। ভূমির মাঝে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল গহবর। ঘন সবুজ দ্বীপের ভূ-তলের এই গহ্বরে লুকিয়ে আছে প্রশস্ত ছায়াময় একটি বীচ, সূর্য্য এবং স্ফটিক স্বচ্ছ জলরাশি!মেরিটা দ্বীপমালা এক সারি দ্বীপের সমষ্টি যার উৎপত্তি হয়েছে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত থেকে। দ্বীপগুলো প্রত্যেকটিই বিস্ময়ের ঝুড়ি, কিন্তু বীচটি সেই ঝুড়িতে রত্ন।প্লায়া ডেল আমোর, Hidden beach হিসেবেই তার বহুল পরিচিতি। এর অবস্থান ম্যারিটো আইল্যান্ডে, মেক্সিকোর পশ্চিম পিওরতো ভালার্তায়, বান্দারাস বে এর মুখে। রটনা বলে, গোপন বীচটি একটি বিশাল বোমা বিস্ফোরনের ফল। মেরিটা দ্বীপমালা সবসময়ই জনবসতিহীন। ১৯ শতকের দিকে ম্যাক্সিকান সরকার দ্বীপগুলোকে বোমা পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করা শুরু করে। অনেক গুহা এবং পাথুরে গঠনের কারণ এই যত্রতত্র বোমা বিস্ফোরণ এবং সম্ভবত গোপন বীচের উৎপত্তিও সেভাবেই।
১৯৬০ সালে বিজ্ঞানী জেকস কসটিউ দ্বীপগুলোতে অমানবিক ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। অবশেষে ২০০৫ সালে দ্বীপগুলোকে ন্যাশনাল পার্ক হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। এখন সেখানে সাঁতার কাটা, কায়াকিং এবং সূর্য্যস্নানই একমাত্র আইনসঙ্গত কার্যক্রম। সামরিক কর্মকান্ডে অনেক ক্ষতি হলেও ধীরে ধীরে ফিরে আসছে দ্বীপের সবুজ এবং সামুদ্রিক স্বাভাবিক জীবন।গোপন বীচটি বাইরে থেকে দেখা যায় না এবং লম্বা পানির টানেল দিয়েই শুধু সেখানে যাওয়া যায় যা বীচটিকে যুক্ত করেছে প্রশান্ত মহাসাগরের সাথে। সেখানে পানির লেভেল থেকে ৬ ফুট উচ্চতা বিদ্যমান। তাই ভ্রমণকারীরা সাঁতার কেটে বা কায়াকিং করে বীচে পোয়ছতে পারবেন। দ্বীপগুলোতে এখনো কোন জনবসতি নেই, তাই উপভোগ করতে পারবেন সম্পূর্ণ নিরবতা।গোপন বীচটি প্রাকৃতিক বিস্ময় নাকি মানুষ্যসৃষ্ট তান্ডবের ফল তা জানা যায় নি এখনো। তবে অপরূপ প্রকৃতিকে ধ্বংস করে সেখানে সামরিক পরীক্ষানিরীক্ষা চালানোর কাজটি খুবই দুঃখজনক। এই ক্ষতি ভুগতে হবে বিশ্বকে, ভবিষ্যত বিশ্ববাসীকে।
No comments:
Post a Comment