নিপাট বাদামি পালকের হৃষ্টপুষ্ট মুরগিটিকে দেখে তার ভেল্কির কথা ঘুণাক্ষরেও টের পাবেন না আপনি। সাধারণ মুরগির সঙ্গে এর তুলনা করলে চলবে না মোটেই। ছোট্ট একটি জিনের সামান্য নড়াচড়ায় এখন রীতিমতো তারকা এই মুরগি। নানা প্রজাতির ডিম একাই পাড়তে পারে জেনেটিক্যালি মডিফ্যায়েড এই মুরগি। শুনে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি।নিজেদের গবেষণাগারে এমনই হাইব্রিড মুরগির জন্ম দিলেন এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি ম্যাসাচুসেটসের আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স-এর এক সম্মেলনে এই অভিনব বিষয়টি সকলের সামনে তুলে ধরেন বিজ্ঞানীরা। এ সম্মেলনেই তারা জানান, জেনেটিক কারিগরির ফলে জন্ম নেওয়া হাইব্রিড এই মুরগি বিভিন্ন প্রজাতির ডিম পাড়তে পারবে।
শুধু তাই নয়, বার্ড ফ্লু’র মতো রোগও অনায়াসেই প্রতিরোধ করতে পারবে এই মুরগি। অর্থাৎ এর ডিম থেকে জন্ম নেওয়া কোনও মুরগিই বার্ড ফ্লু’র বাহক হবে না।এডিনবরার বিজ্ঞানীরা জানান, পাখিদের প্রজননে মুখ্য ভূমিকা নেয় ডিডিএক্স৪(DDX4) নামক জিনটি। জিন এডিটিং পদ্ধতিতে মডিফাই করা হয়েছে এই জিনটিই। তবে নিজের ডিম পাড়তে পারবে না হাইব্রিড এই মুরগি। তাহলে কীভাবে বিভিন্ন প্রজাতির মুরগির জন্ম দেবে সে?এডিনবরাহাইব্রিড ওই মুরগির দেওয়া কয়েক প্রজাতির ডিম।বিজ্ঞানীদলের প্রধান গবেষক মাইক ম্যাকগ্রিউ জানান, এই মুরগি আসলে সরোগেট মাদারের ভূমিকা পালন করবে। সেটা ঠিক কী রকম? যদি অন্য কোনো প্রজাতির মুরগির স্টেম সেল এনে হাইব্রিড মুরগির গর্ভে স্থাপন করা হয় তাহলে সেই প্রজাতির ডিম নিজের দেহে তৈরি করবে এই হাইব্রিড মুরগি। এবং সেই প্রজাতির মুরগির ডিম দেবে সে।
কিন্তু হঠাৎ কেন এই ধরনের মুরগি তৈরির কথা মাথায় আসল বিজ্ঞানীদের? ম্যাকগ্রিউ বলেন, ‘আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বিলুপ্ত প্রজাতির মুরগি সংরক্ষণ।’যেহেতু এই মুরগি অন্য প্রজাতির ডিমও পাড়তে পারে, তাই বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি সংরক্ষণ করতে নতুন এই হাইব্রিড মুরগি সাহায্য করবে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।ইতিমধ্যেই ‘রাম্পেল্স গেম’, ‘স্কটস ডাম্পি’, ‘সিসিলিয়ান বাটারকাপ’, ‘ওল্ড ইংলিশ ফেজ্যান্ট ফাউল’ প্রভৃতি বিরল প্রজাতির মুরগির ডিম পেড়েছে এই হাইব্রিড মুরগি। বিজ্ঞানীরা জানান, অদূর ভবিষ্যতে বিরল ও লুপ্তপ্রায় প্রজাতিকে ফের নতুন করে বাঁচিয়ে তুলবে এই মুরগি।