কিউবা : কিউবা পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের বৃহত্তম ও পশ্চিমে অবস্থিত দ্বীপ। আশপাশের অনেকগুলো ছোট দ্বীপের সঙ্গে মিলে কিউবা প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়েছে। ক্যারিবীয় সাগর ও মেক্সিকো উপসাগরের মধ্য দিয়ে সব সমুদ্রপথের ওপর দেশটি অবস্থিত। কিউবা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বহিঃবিশ্বের সাথে বিছিন্ন হলেও এর রয়েছে অঢেল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বিভিন্ন বিরল প্রজাতির বন্য প্রানী।ক্যারিবিয়ান জলাভুমির জাপাটায় রয়েছে অতি বিরল প্রজাতির কিউবিয়ান কুমির। এছাড়া কানিমার নদীতে আছে বিরল প্রজাতির কয়েকশ কাঁকড়া ও মাছ ।
দক্ষিণ জর্জিয়া দ্বীপ : এন্টার্কটিকা দ্বীপপুঞ্জ এর অন্তর্ভুক্ত। রয়েছে প্রানী বৈচিত্র্য। দক্ষিণ জর্জিয়া এর উপকূলীয় জলে ১৪৪৫ টি সামুদ্রিক প্রজাতির মাছ পাওয়া গেছে। আছে ক্রিমির মত উদ্ভট জীব, আইসফিস এবং সমুদ্র মাকড়সা। অন্য প্রানীদের মধ্যে পেঙ্গুইন উল্লেখযোগ্য।
গালাপাগোস : দক্ষিন আমেরিকার সমুদ্র উপকুল হতে আনুমানিক এক হাজার কিলোমিটার পশ্চিমে ইকুয়েডর এর নিকটবর্তী আগ্নেয়শিলা দ্বারা গঠিত ভূমিখণ্ডের দ্বীপগুচ্ছ নিয়ে রহস্যময় যে দ্বীপগুলো পৃথিবীর বুকে দাঁড়িয়ে আছে তাই “গালাপাগোস” নামে পৃথিবীজুড়ে পরিচিত।এই দ্বীপ ভ্রমণে আসেন বিখ্যাট বিবর্তন বিজ্ঞানী ডারউইন। দ্বীপপুঞ্জে থাকার শেষ দিনগুলোতে ডারউইন ভাবতে শুরু করেছিলেন, একেক দ্বীপে ফিঞ্চ ও কচ্ছপের এই বৈচিত্র্য প্রজাতির পরিবর্তন সম্পর্কে নতুন ধারণার জন্ম দিতে পারে। ইংল্যান্ডে ফিরে এসে ডারউইন গালাপাগোস সহ ভ্রমণের সময় বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত নমুনাগুলো অভিজ্ঞ জীববিজ্ঞানী ও ভূতত্ত্ববিদদের দ্বারা পরীক্ষা করিয়ে দেখতে পেলেন, গালাপাগোসের ফিঞ্চগুলো বিভিন্ন প্রজাতির এবং দ্বীপ অনুযায়ী তাদের বৈশিষ্ট্য অনেক ভিন্ন। এই তথ্যগুলোই ডারউইনকে তার প্রাকৃতিক নির্বাচন এর মাধ্যমে বিবর্তন প্রমাণের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। এ ধারণা থেকেই তিনি তার সবচেয়ে বিখ্যাত বই অন দি অরিজিন অভ স্পিসিস রচনা করেন ।
বোর্নিও : পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। বোর্নিও মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রুনেইয়ের মধ্যে বিভক্ত। দ্বীপটির মোট আয়তন ৭৫১,১০০ বর্গকিমি বা ২৯০,০০০ বর্গ মাইল। দ্বীপে বানর প্রজাতির স্তন্যপায়ী ১০টি প্রজাতি, ৩৫০ ধরনের পাখি, ১৫০ ধরনের সরিসৃপ ও উভচর ছাড়াও আছে ৬ হাজার প্রজাতির বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ এবং প্রায় একশ এর বেশি কীটপতঙ্গ পাওয়া গেছে।
সুমাত্রা : সুমাত্রা ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিমে অবস্থিত একটি দ্বীপ। আয়তন প্রায় ৪,৭৩,৪৮১ বর্গ কিলোমিটার এবং এটি আয়তনের দিক থেকে পৃথিবীর দ্বীপগুলোর মধ্যে ৬ষ্ঠ। সুমাত্রার জীববৈচিত্র্য বিস্ময়করভাবে সম্বৃদ্ধ। বাঘ, হাতি, হনুমান, গন্ডার, ওরাংওটাং ও অন্যান্য বন্য প্রজাতির নিরাপদ আবাসস্থল বলে ধরে নেয়া হয় এই দ্বীপটিকে।সুমাত্রান বাঘকে এই অঞ্চলের একটি বিশেষ প্রজাতির প্রানী হিসেবে ধরা হয়। এখানে প্রায় ৪০০ বিরল প্রজাতির প্রানী বাস করে।
মাদাগাস্কার : মাদাগাস্কার, বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দ্বীপ। আয়তন ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৪১ বর্গ কিমি। মাদাগাস্কার সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত এর অসাধারণ আর অদ্ভুতুড়ে জীববৈচিত্র্যের কারণে। মাদাগাস্কারের জীবজন্তুগুলোর ৮০ ভাগই পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না। মাদাগাস্কারে প্রায় ৬০০ প্রজাতির জীব আছে। এই দ্বীপের ৬০০ প্রজাতির জীবের মধ্যে নানারকম গাছপালা আছে ৩৮৫ প্রজাতির, কীটপতঙ্গ আছে ৪২ প্রজাতির, মাছ আছে ১৭ প্রজাতির, উভচর প্রাণী আছে ৬৯ প্রজাতির, সরীসৃপ আছে ৬১ প্রজাতির আর স্তন্যপায়ী প্রাণী আছে ৪১ প্রজাতির।বিজ্ঞানীদের হিসাবমতে, মাদাগাস্কারে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২ লক্ষ প্রাণী এবং গাছ আছে, যার মধ্যে প্রায় দেড় লক্ষ প্রজাতিই পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। এদের মধ্যে রয়েছে প্রায় ১৫ প্রজাতির লেমুর, ৩৬ প্রজাতির পাখি এবং আরো অনেক অদ্ভূত অদ্ভূত সব প্রাণী। আবার মাদাগাস্কারের অসংখ্য ব্যাঙের মধ্যে শতকরা ৯৫ ভাগই শুধু মাদাগাস্কারেই পাওয়া যায়।
নিউজিল্যান্ড : অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্বের ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র নিউজিল্যান্ড। দেশটির পরিবেশ এবং প্রাণীকূল বৈচিত্র্যময়। কিইউ পরিচালক পিটার জ্যাকসনের বিখ্যাত সিনেমা 'লর্ড অফ রিংগস' এ নিউজিল্যান্ডের প্রায় সব জীব বৈচিত্র্যের দেখা পাওয়া যায়। দেশটিতে রয়েছে বিরল প্রজাতির প্রায় বাদুর,সরিসৃপ আর ফিসওয়াটার মাছ। এছাড়াও রয়েছে ২০ হাজার প্রজাতির ছত্রাক।
তাসমানিয়া : তাসমানিয়া একটা অস্ট্রেলিয়ান দ্বীপ রাজ্য যা মূল ভূমি থেকে ২৫০ কিমি দক্ষিনে, বস প্রনালী দ্বারা বিভিক্ত। এইটা হলো পৃথিবীর ২৬ তম বৃহত্তম দ্বীপ। তাসমানিয়াকে বলা হয় তার দেশের জীববৈচিত্রের হটস্পট।তাসমানিয়ায় রয়েছে মাংশাসী প্রানী; যেগুলোকে বলা হয় তাসমানিয়ান শয়তান। এছাড়াও রয়েছে হুয়ান পাইন গাছ,যেগুলো খুব ধীরে বড় হয় কিন্তু বেচে থাকে অবিশ্বাস্যভাবে প্রায় ৩ হাজার বছর।আরো আছে পেঙ্গুইন, তোতা এবং বিরল প্রজাতির সুদর্শন পামলিক গাছ ।
পালাউ : পালাউ প্রজাতন্ত্র পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের একটি স্বাধীন প্রজাতান্ত্রিক দ্বীপরাষ্ট্র। দেশটি কালো দ্বীপপুঞ্জ নামেও পরিচিত। আয়তন মাত্র ১৭০ বর্গ মাইল।কিন্তু আয়োতন কম হলে হবে কি, দ্বীপটির জলে আর স্থলে রয়েছে প্রাকৃতিক সব বন্যপ্রানীতে ভরপুর। উপকুলবর্তী অঞ্চলে রয়েছে কোরাল ও ক্রাস্টেসিয়ান এর সমারোহ। আরো আছে ওয়াটার ফিস, জেলি ফিস ।
কোইবা দ্বীপ, পানামা : পানামার মূল ভূখণ্ড থেকে ১৫ মাইল দূরে অবস্থিত ১ লাখ ২২ হাজার একর বিস্তৃত ইসলা কোইবা পানামার সবচেয়ে বড় দ্বীপ। এই দ্বীপের চারদিকের সমুদ্রে রয়েছে হাঙরের অবাধ বিচরণ। এখানকার মতো এমন ম্যানগ্রোভ বন, আদিম বেলাভূমি পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না। কোইবা দ্বীপ হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র স্থান যেখানে এখনও লম্বা লেজওয়ালা লাল রঙের টিয়ে পাখি এবং ঝুঁটিওয়ালা ঈগল টিকে আছে। ২০০৫ সালে ইউনেস্কো ৩৭টি ছোট ছোট দ্বীপ পরিবেষ্টিত কোইবা ন্যাশনাল পার্ককে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।কোইবা দ্বীপে প্রায় ৭০০ এর মত সামুদ্রিক মাছের সন্ধান পাওয়া গেছে।
No comments:
Post a Comment