বয়স তাঁর ৭৮ বছর। কিন্তু সমবয়সি অন্য যে কোনও বৃদ্ধ বা বৃদ্ধার তুলনায় অনেক শক্তপোক্ত দেহ তাঁর। শরীরে এখনও থাবা বসাতে পারেনি জরা কিংবা অন্য কোনও বয়সঘটিত রোগ। এখনও কৃষিজমিতে কাজ করেন সকাল-সন্ধে। কিন্তু কুসমাবতী নামের এই মহিলার এমন সুস্বাস্থ্যের রহস্যটা কী? তাঁর নিজের দাবি, প্রতি দিন নিয়মিত বালি খাওয়ার অভ্যাসই তাঁর এই বার্ধক্যরূপী তারুণ্যের মূলে। শুনতে যতই অদ্ভুত লাগুক, বারাণসী নিবাসী কুসমাবতী বিগত ৬৩ বছর ধরে নিয়মিত বালি খেয়ে আসছেন। দিনে পাঁচ-ছ’ বার দু’ মুঠো করে বালি খান তিনি। এবং এই বিচিত্র অভ্যাসের ফলে তাঁর শরীর অসুস্থ হওয়ার পরিবর্তে বরং নীরোগ থাকে। কিন্তু কেন এমন অদ্ভুত অভ্যাস? কুসমাবতী দেবী জানালেন, তাঁর বয়স যখন বছর পনেরো, তখন এক বার দুরারোগ্য পেটের অসুখে শয্যাশায়ী হয়ে প়ড়েন তিনি। কোনও এক আত্মীয় পরামর্শ দেন, বালি খেলেই রোগমুক্তি ঘটবে। পরামর্শ শিরোধার্য করে বালি খেতে শুরু করেন কুসমাবতী। কয়েক দিনের মধ্যেই সেরে যায় রোগ। সেই শুরু। তার পর ৬৩ বছর কেটে গিয়েছে, কিন্তু বালি খাওয়ার অভ্যাস কুসমাবতী ছাড়েননি। তাঁর ধারণা, বালির মধ্যে এমন কোনও গুণ রয়েছে, যা তাঁকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। কারণ তাঁর দাবি, নিয়মিত বালি খাওয়ার ফলেই এই বয়সেও একেবারে সুস্থ রয়েছে তাঁর দেহ। কিন্তু বালি খেতে ঘেন্না করে না? কুসমাবতী জানান, ‘তা কেন! বরং বালি বেশ ভালই খেতে। অনেকটা নুন-চিনির মিশ্রণ যেমন হয়, তেমনই নোনতা-মিষ্টি স্বাদ হয় বালির।’ কুসমাবতীর বাড়ির লোকেরা আপত্তি করেন না? বৃদ্ধার ছেলে রমেশ বললেন, ‘আপত্তি করব কেন? ছোটবেলা থেকেই তো মা-কে বালি খেতে দেখছি। আর কোনও দিন তো এর জন্য মায়ের শরীর খারাপ হয়েছে বলে দেখিনি। আর মা যে শুধু বালিই খান, তা তো নয়। অন্যান্য খাবারদাবারের পাশাপাশি কয়েক মুঠো বালিও খেয়ে নেন, অনেকটা ওষুধের মতোই। মায়ের বিশ্বাস, বালি খেলে শরীর ভাল থাকে। সেই বিশ্বাস যদি সত্যি হয়, তা হলে বালি খাওয়ায় বাধাই বা দেব কেন আমরা!’তা রমেশ নিজেও মায়ের দেখাদেখি বালি খাওয়া শুরু করেন না কেন? রমেশ হেসে বলেন, ‘আরে না না। ও সব আমাদের কম্ম নয়। মা খেতে পারেন, কারণ মায়ের নিশ্চয়ই কোনও আলাদা ক্ষমতা রয়েছে। আমরা বালি খেলে অসুস্থ হয়ে পড়ব।’রমেশ যা-ই বলুন, কুসমাবতীর ধারণা, নিয়মিত বালি খেলে শরীরের উপকার বই অপকার হয় না। এই ৭৮ বছর বয়সেও তাই মুঠো মুঠো বালি গলাধঃকরণ করে চলেছেন তিনি।
No comments:
Post a Comment