১৫ বছর ধরে বন্ধু ওরা। একেবারে অন্তরঙ্গ বন্ধু। দীর্ঘ এই সময়টি ধরে একবারের জন্যও একজন ছেড়ে যায়নি অন্যকে। ওদের তিনজনের নাম বালু, লিও এবং শের খান। বসবাস যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে। নাহ, আমি কোনো মানুষের কথা বলছি না। বলছি তিনটি হিংস্র প্রাণির কথা। এর একটি মার্কিন কালো ভালুক (বালু), আফ্রিকান সিংহ (লিও) এবং বাংলাদেশের রয়েল বেঙ্গল জাতের বাঘ (শের খান)। অবিশ্বাস্য হলেও গত ১৫ বছর ধরে জর্জিয়ার একটি অভয়ারণ্যে একসাথে বাস করে আসছে ওরা। প্রাণিগুলোর বয়স যখন এক বছরের কম তখন জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ‘নোয়া‘স আর্ক অ্যানিমেল শেল্টারে’ নিয়ে আসা হয় ওদের। যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা অঙ্গরাজ্যের একটি বাড়ি থেকে ২০০১ সালে পুলিশ ওই প্রাণিগুলোকে উদ্ধার করার পর এখানে নিয়ে আসা হয়। তখন থেকেই কর্তৃপক্ষ ওদের একসঙ্গে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। আর সেই থেকে বন্ধু ওরা।
নোয়া’স আর্কের সহাকারী পরিচালক ড্যানি স্মিথ বলেন, আমরা তাদের আলাদা রাখতে পারতাম, কিন্তু সে সময় তারা একটি পরিবারের মতো এসেছিল। যে কারণে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ তাদের একত্রে রাখারই সিদ্ধান্ত নেয়। আমাদের জানা মতে এটাই একমাত্র জায়গা যেখানে এই তিনটি হিংস্র পশুকে একত্রে রাখা সম্ভব হয়েছে। প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে পর্যটকরা এদের বন্ধুত্বের সাক্ষী।এই দীর্ঘ সময়ে তাদের একবারই আলাদা করা হয়েছিল যখন ভাল্লুক বালোর সংক্রামণ চিকিৎসা করতে বাম পা থেকে জিন খুলতে অস্ত্রপ্রচারের দরকার হয়েছিল।সে সময় শের খান এবং লিওকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন তারা বালোর ফিরে আসারই অপেক্ষা করছে। একটু বড় হওয়ার পরে তাদের ভিন্ন জায়গায় রাখার সামর্থ্য আমাদের ছিল না। কিন্তু এখন তাদের দেখলেই মনে হবে যেন তারা একই মায়ের গর্ভে জন্ম নেওয়া তিন ভাই। তাদের এ বন্ধন এত বেশি শক্ত যে অন্য কোথাও স্থানান্তর করা হলে তারা বন্ধুশূন্য হয়ে পড়বে।
তিনি আরো বলেন, বালোর সঙ্গে শের খানেরই বেশি ভাব। কারণ লিও দিনের বেশিটা সময় ঘুমিয়ে কাটাতেই পছন্দ করে। আমেরিকান এই কালো ভাল্লুক বাংলাদেশি বাঘের ঘাড়ে হাত দিয়ে এমনকি গৃহপালিত বেড়ালের মতো জিহ্বা দিয়ে চেটেও আদর করে, এ দৃশ্য দেখলে সত্যিই অদ্ভুত এবং জাদুর মতো মনে হয়।আবার লিও ঘুম থেকে জাগলে ক্ষুধা পাওয়ার আগে পর্যন্ত তিনজন খেলতে থাকে। তিন শিকারি প্রাণীরই অন্যকে হত্যা করার ক্ষমতা থাকলেও অশ্চর্যজনকভাবে তারা একে অন্যের প্রতি খুবই সহনশীল আচরণ করে।শের খান একটু গম্ভীর প্রকৃতির, নড়াচড়া কম করতে পছন্দ অথচ বালো তাকে দক্ষ হাতে পরিচালানা করে ঠিক খেলার সঙ্গী বানিয়ে নেয়। এখন নোয়া’র আর্কই যেন তাদের বাড়ি হয়ে উঠেছে। আর কখনও হয়তো বা তারা আলাদা থাকাতেও পারবে না।ড্যানি স্মিথ আরও বলেন, তারা একসঙ্গেই ঘুমায় বলে তাদের থাকার ঘরটি খুবই মজবুত করে তৈরি করা হয়েছে। থাকার ঘরের সঙ্গে আমরা একটি চৌবাচ্চার ব্যবস্থাও করেছি। কারণ শের খান এবং বলো দুজনই পানিতে নামতে ভালোবাসে।
No comments:
Post a Comment