১০ বছর ধরে জীবনের সিংহভাগ সময়ই পানির নিচেই থাকছেন, খাচ্ছেন, ঘুমাচ্ছেন ডেরন বার্কপাইল।১০ বছর আগে ফ্লোরিডা কিজ মেরিন স্যাঙ্কচুয়ারিতে ৬৩ ফুট পানির নিচে ‘অ্যাকুয়ারিয়াস আন্ডারওয়াটার ল্যাবে’ প্রথমবারের মতো আসার স্মৃতি এখনো উজ্জ্বল ডেরনের মনে।“সাধারণত ঘণ্টাখানেক, খুব বেশি হলে দুই ঘণ্টা পানিতে কাটিয়ে নৌকায় ফিরে যাওয়াই অভ্যাস আমাদের। ফলে সেদিন প্রথমেই যে কথাটি মনে হয়েছিলো, দুই সপ্তাহের জন্য সূর্যের মুখ দেখতে পাচ্ছি না আমি।”পিঠে স্কুবা ট্যাঙ্ক বেঁধে আরো তিন সহকর্মীর সঙ্গে প্রায় গোধূলিবেলায় সাঁতরে ‘অ্যাকুয়ারিয়াস’ গবেষণাগারের দিকে যাচ্ছিলেন ডেরন। সেটাই এখন জীবনের সবচেয়ে চমৎকার অভিজ্ঞতাগুলোর অন্যতম বলে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান তিনি।
তবে এ পর্যন্ত মহাকাশে যতো মানুষ গেছে, পানির নিচে বসবাসের চেষ্টা করেছে তার চেয়ে অনেক কম।পানির নিচে জীবনযাপনে অভ্যস্ত গবেষক ডেরন নিজে বলছেন, প্রতিদিন নিয়ম করে গবেষণাগারের বাইরে গিয়ে পানিতে গা ভিজিয়ে আসতে হয় তাদের। তবে পানির নিচে জীবন যাপনের একটা বাজে দিক হল বাচ্চাদের মতো ‘ন্যাপি র্যােশে’র যন্ত্রণা পোহাতে হয়।অ্যাকুয়ারিয়াসে প্রতিবার ১০ দিনের জন্য যান একেকজন গবেষক। ডেরন বলেন, পানির নিচে এর মধ্যেই প্রায় এক মাসের কাজ করে ফেলা যায়।তবে কয়েকদিন পরেই শরীরের ত্বক বেশ পাতলা ও দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে সহজেই কেটে যায়। সাঁতারের পোশাকটাও যেন কেটে বসে শরীরের বিভিন্ন অংশের ওপর।
১৯৬০ সালে পানির নিচে প্রথম গবেষণাগারটি তৈরি করেন জ্যাকুইস কোস্তে ও তার গবেষক দল। পানির নিচের গবেষণাগারগুলো সেসময়ের পর আকারে খুব বেশি বড় হয়ে ওঠেনি।অ্যাকুয়ারিয়াসে কর্মরত ডেরন বলেন, একটা স্কুল বাসের সমান জায়গা রয়েছে গবেষণাগারের ভেতরে। শুনতে অনেক বড় শোনালেও এর মধ্যেই রয়েছে বেশ ক’টা টেবিল ও গবেষণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি।এর ভেতরেই গবেষকদের খেতে হয় পালা করে, সরু পথ ধরে হাঁটাচলা করতে হয় সাবধানে। গরম পানির সরবরাহ কম হওয়ায় গোসলের সুবিধা কম। আগুন জ্বালানো সম্ভব নয় বলে খাবার বলতে বেশির ভাগই ফ্রিজে সংরক্ষিত শুকনো খাবার, স্যান্ডউইচ প্রভৃতি।
গবেষণাগারের কোনো মেরামত প্রয়োজন হলে তাও গবেষকদের নিজেদেরই করে নিতে হয়।পানির নিচে বসবাসই মানবজাতির ভবিষ্যতের আবাস, এটা বহু আগে থেকেই প্রস্তাব করে আসছেন অনেক গবেষক।অনেকেই বলছেন, বর্তমানের বহু বিপর্যয়ে পূর্ণ পৃথিবীতে পানির নিচে লোকালয় গড়ে তোলাই মানবসভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখার মোক্ষম উপায়। জনসংখ্যা বিস্ফোরণ এড়ানোর জন্যও এটা কার্যকর উপায় হতে পারে বলেও মনে করেন অনেকে।ইতোমধ্যেই মালদ্বীপ, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও নরওয়েতে পানির নিচে হোটেল তৈরির পরিকল্পনা করছে কয়েকটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান।
No comments:
Post a Comment