আজব পৃথিবী

Monday, April 7, 2014

রহস্যময় গোলক

কোস্টা রিকা, ১৯৩০ সালের কোনো এক সকাল। ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানি তাদের নতুন কলাবাগান করার জন্য জঙ্গল পরিষ্কার করছিল। এমন সময় কোম্পানির একজন নির্বাহী কর্মকর্তার মেয়ে ডরিস স্টোন জঙ্গলের মধ্যে অদ্ভুত কিছু জিনিস দেখতে পান। এগুলো ছিল পাথরের তৈরি কিছু গোলক, ঠিক যেন নিখুঁত, মসৃণ পাথরের বল! ডরিসের উত্তেজিত চিত্‍কারে ছুটে আসে কর্মরত কর্মীরা। তারা বলগুলো সরাতে ভারী বুলডোজার ব্যবহার করে। ফলে বেশ কিছু গোলক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।পৃথিবীতে রহস্যময় জিনিসের অভাব নেই। এর মধ্যে কিছু রহস্যের খোলাসা হয়েছে, বেশির ভাগেরই হয়নি। পৃথিবীর বহু রহস্যময় জিনিস, যেগুলোর পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি, তার মধ্যে কোস্টা রিকার প্রস্তর গোলক একটি! তবে বৈজ্ঞানিক তদন্তের ফলে এই গোলকগুলো সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা গেছে।

কোস্টা রিকার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় ১৮৬টি পাথরের গোলকের সন্ধান পাওয়া গেছে। বেশির ভাগ গোলক তৈরি করা হয়েছে গাব্রো নামের এক ধরনের পাথর দিয়ে, যা অনেকটা গ্রানাইটের মতো। কিছু গোলক তৈরি করা হয়েছে চুনাপাথর দিয়ে আর কিছু তৈরি করা হয়েছে বেলেপাথর দিয়ে। এই গোলকগুলোর ব্যাস ৫ সেন্টিমিটার থেকে ২ মিটারেরও বেশি পর্যন্ত এবং ওজন ১৬ টন পর্যন্ত! ধারণা করা হয়, স্থানীয় আদিবাসীদের পূর্বপুরুষরা এগুলো তৈরি করে। খ্রিষ্টপূর্ব ২০০ অব্দ থেকে ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে কোনো এক সময়ে এগুলো তৈরি করা হয়। তবে কী উদ্দেশ্যে এগুলো তৈরি করা হয়েছিল, তা আজও জানা যায়নি।কোস্টা রিকার এই প্রস্তরগোলকগুলো নিয়ে অনেক উপকথা চালু আছে। যেমন এগুলো এসেছে আটলান্টিস থেকে! স্থানীয় আদিবাসী লোককাহিনী অনুযায়ী, তাদের পূর্বপুরুষরা পাথর নরম করার উপায় আবিষ্কার করেছিল! ফলে খুব সহজেই তারা এই গোলকগুলো তৈরি করতে পেরেছিল। আবার এ কথাও প্রচলিত রয়েছে যে, গোলকের ভেতরে সোনা লুকানো রয়েছে! ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানির কিছু শ্রমিক এ গল্প থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে ড্রিল মেশিন দিয়ে কিছু গোলক ফুটো করে ফেলেছিল! শুধু তাই নয়, অতি উত্‍সাহী কয়েকজন কিছু পাথরের গোলক ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়!

নানান উপকথার পাশাপাশি চালু আছে ভিনগ্রহবাসীদের কল্প কাহিনীও। আপনারা কল্প কাহিনী বলুন আর যাই বলুন, অনেকেই কিন্তু মনে করে থাকেন যে গোলক গুলো আসলে ভিনগ্রহ বাসীদের আগমনের প্রমাণ। এত অতিকায় আক্রিত পাথর দিয়ে সেই প্রাচীন কালে মানুষ তৈরি করে ফেলল নিখুঁত সব গোলক, তাও কি সম্ভব? এত প্রযুক্তি আর জ্ঞান তাঁরা পেলোই বা কোথায়? নিঃসন্দেহে তাঁদেরকে সাহায্য করে পৃথিবীর বাইরে অন্য কোনো দুনিয়া হতে আগত প্রাণীরা।... হ্যাঁ, এমনটা ধারনাই পোষণ করে থাকেন অনেক গবেষক।কোস্টা রিকার প্রস্তর গোলকগুলো তাদের নিখুঁত, মসৃণ গোলাকৃতির জন্য ব্যাপক আলোচিত ছিল সে সময়ে! কিন্তু কালের করালস্রোতে বেশ কিছু গোলক ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং গুপ্তধন শিকারীদের কারণে বেশির ভাগ গোলক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে গোলকগুলোর আসল আকার এখন আর বোঝার উপায় নেই! কিছু গোলক কোস্টা রিকার জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।


No comments:

Post a Comment