মাছ ডিম পাড়ে এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু যদি বলা হয়, মাছ বাচ্চা দেয় এবং বুকের দুধ খাওয়ায়, তাহলে নিঃসন্দেহে অবাক হওয়ার কথা। আজব মনে হলেও ব্যাপারটি পুরোপুরি সত্য। আর এ মাছটির নাম হলো এলপাউট।তবে তাদের এই দুধ খাওয়ানোর বিষয়টি অবশ্য একটু আলাদা। স্থলচর স্তন্যপায়ী প্রাণীরা তাদের বাচ্চাদের জন্মের পরে দুধ খাওয়ায় কিন্তু এই মাছেরা তাদের বাচ্চাকে দুধ খাওয়ায় জন্মানোর আগেই। মায়ের পেটে থাকা অবস্থায়ই এই মাছের ছানারা দুধ খেয়ে বড় হতে থাকে। এরপর যখন উপযুক্ত হয়ে যায় ছানারা তখনই তারা জন্ম নেয়।
ইউরোপের সমুদ্রতীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় এ প্রজাতির মাছের সন্ধান পাওয়া যায়। বেশি দেখা যায়,ইংলিশ চ্যানেলের কাছে । এলপাউট দেখতে অনেকটা ইল মাছের মতো। একটি বড় এলপাউট সর্বোচ্চ ২০ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয় এবং ওজন হয় পাঁচ কেজিরও বেশি।এ মাছ শুধু বাচ্চা জন্মই দেয় না, জন্মের পর বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরেও বেড়ায় এবং খেতে ও খেলতে শেখায়। শুধুই তাই নয়, অন্য কোন প্রাণী যাতে বাচ্চাদের আঘাত বা খেয়ে না ফেলে, সেদিকেও মা মাছটি রাখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি।
এলপাউট সাধারণত বাস করে সমুদ্রের তীরে পাথরের তলায়। পাথরের নিচে স্যাঁতসেঁতে জায়গা বা সমুদ্রের কোনো আগাছার নিচেও মাছটি ঘাপটি মেরে বসে থাকতে পারে। মাঝে মধ্যে গভীর পানিতে থাকতে ভালো না লাগলে সঙ্গে সঙ্গে ডাঙার দিকে স্বল্পজলে চলে আসে।পাথরের গায়ে লেগে থাকা বিভিন্ন শৈবাল ও অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ খেয়ে থাকে। অবশ্য এগুলোই মাছটির প্রধান খাদ্য। মজার ব্যাপার হলো, স্থলচর স্তন্যপায়ীর মতোই এলপাউট পোনামাছকে দুধ পান করায়। এ প্রক্রিয়া চলে পোনা বা বাচ্চা জন্মানোর আগেই। মায়ের পেটে থাকা অবস্থাতেই পোনা এলপাউট দুধ খেয়ে বড় হতে থাকে। মায়ের পেটেই বড়সড় এবং শক্তপোক্ত হওয়ার পর জন্ম নেয়। মা এলপাউট একসঙ্গে ৩০ থেকে ৪শ'টি পর্যন্ত পোনা ছাড়ে। আর জন্মের সময় একেকটি পোনা ৩ থেকে ৫ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়।
অন্য সব মাছ ডিম পাড়লেও এলপাউটের ডিম বড় হয় মায়ের পেটেই। তারপর পেটের মধ্যেই জন্ম নেয় পোনারা। এভাবে মায়ের পেটে পোনাগুলো ছয় মাস পর্যন্ত কাটিয়ে দেয়। বের হয়ে আসার জন্য নির্দিষ্ট প্রহরের জন্যও অপেক্ষা করে। এলপাউটের পোনাগুলো সাধারণত মায়ের পেট থেকে বের হয়ে আসে শীতকালে। পানি যখন অনেক বেশি শীতল হয়ে বরফের কাছাকাছি আসে, তখনই এরা মায়ের পেট থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে।আর এইভাবেই চলে এলপাউট এর বংশবিস্তার।
No comments:
Post a Comment