আজব পৃথিবী

Monday, May 12, 2014

বিশ্ব বিখ্যাত ১০ টি ভূতুড়ে জায়গা, সাহস থাকলে ঘুরে আসতে পারেন যেখানে!

আপনি কি ভূতে বিশ্বাস করেন? বিশ্বাস করেন আজও অনেক পোড়ো বাড়িতে ঘুরে বেড়ায় অতৃপ্ত আত্মা? কিংবা বিশেষ কিছু গাছে বাস করে নানা ধরণের ভূত। অনেকে মনে করে এই সবই মানুষের মনের কল্পনা এবং ঠাকুরমার ঝুলির মতো রূপকথা। কিন্তু আপনি জানেন কি বিশ্ব জুড়ে রয়েছে অনেক ভূতুড়ে জায়গা যেখানে গেলে দেখা পাওয়া যায় সত্যিকারের ভূত? অনেকে হয়তো বিশ্বাস করবেন না এই ঘটনাকে। বলবেন ভূত বলতে কিছুই নেই।

কিন্তু আসলেই কি কিছুই নেই? সবই কি মানুষের মনের ভ্রম? সব ক্ষেত্রে হয়তো মনের ভ্রম কথাটি খাটে না। আজকে চলুন তবে দেখে নেয়া যাক বিশ্ব বিখ্যাত ১০ টি ভূতুড়ে জায়গা যেখানে দেখা মেলে সত্যিকারের ভূতের। বিশ্বাস না হলে এবং সাহস থাকলে ঘুরে আসতে পারেন এইসব জায়গাগুলো।

চাঙ্গি বীচ, সিঙ্গাপুর
চাঙ্গি বীচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একটি বধ্যভূমি হিসেবে ব্যবহৃৎ জায়গা। সেই সময়ে ‘সোক চিং’ যুদ্ধের সময় জাপানীরা নিজেদের বিরোধী সন্দেহে হাজার হাজার নির্দোষ চীনের অধিবাসীদের নির্বিচারে হত্যা করেছিলেন এই জায়গায়। এর পর থেকে অদ্ভুত ধরণের শব্দ, চিৎকার এবং কান্নার আওয়াজ আসে এই জায়গা থেকে। এবং আজ পর্যন্ত প্রায় হাজারখানেক মানুষ এই ধরণের আওয়াজ শোনার কথা স্বীকার করেন।

ওহিও ইউনিভার্সিটি, এথেন্স, আমেরিকা
আমেরিকার এই ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস বিশ্বের সব চাইতে ভূতুড়ে ক্যাম্পাস হিসেবে পরিচিত। এই পুরো ক্যাম্পাসে রয়েছে ৫ টি সমাধিক্ষেত্র যা একটি পঞ্চভুজ তৈরি করে। এবং ক্যাম্পাসের একাডেমীক বিল্ডিংটি এই পঞ্চভুজের ঠিক মাঝে অবস্থিত। জেফারসন হলের সমাধিক্ষেত্রে প্রায়শই প্রেতাত্মা ঘুরে বেড়ানোর কথা শোনা যায়। এছাড়াও ক্যাম্পাসের পরিত্যক্ত মানসিকরোগীর অ্যাসাইলাম যেখানে চিকিৎসার জন্য বৈদ্যুতিক শকের ব্যবস্থা ছিল সেখানেও অনেক অদ্ভুত কিছু নজরে পরে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

স্ক্রিমিং টানেল, নায়াগ্রা ফলস, অন্টারিও
বিশ্ব বিখ্যাত ভূতুড়ে জায়গা এই স্ক্রিমিং টানেল। এটি ওয়ারনার রোডের একটি রেললাইনের নিচ দিয়ে চলে যাওয়া একটি টানেল। এই টানেলটি নায়াগ্রা ফলস, টরেন্টো এবং নিউ ইয়র্ক সিটিকে যোগ করে। এখানকার মানুষজনের মতে, যদি এই অন্ধকার টানেলের মাঝে মধ্যরাতে একটি ম্যাচের কাঠি জ্বালান তবে এর আগুন টানেলের বাইরে চলে যাবে এবং আপনি একটি মেয়ের আর্তচিৎকার শুনতে পাবেন।

ভাঙ্গার দুর্গ, ইন্ডিয়া
ইন্ডিয়ার রাজস্থানের জয়পুর থেকে খানিকটা দূরে এই দুর্গের অবস্থান। কিংবদন্তি অনুসারে, সিঙ্ঘিয়া নামক কালো জাদুর তান্ত্রিক বহুযুগ আগে এই দুর্গের বাসিন্দাদের অভিশাপ দিয়েছিলেন, যে মৃত্যুর বহুকাল পর পর্যন্ত তাদের আত্মা এই দুর্গে বন্দি থাকবে। এই জায়গার সব চাইতে আশ্চর্যজনক আরেকটি ঘটনা হচ্ছে, এখানকার কোনো বাড়ির ছাদ নেই। সব বাড়ি ছাদ ছাড়া তৈরি করা। কারণ কোনো বাড়িতে ছাদ তৈরি করা হলে তা সাথে সাথেই ভেঙে পরে। যতো টুরিস্ট এই জায়গায় ভ্রমণে আসেন সকলের একই অভিমত তারা প্রতিটি মুহূর্ত উদ্বেগ ও অস্থিরতার মধ্যে কাটিয়েছেন। সন্ধ্যার পর এই দুর্গে যারা গিয়েছেন তারা আজক পর্যন্ত কেউ ফিরে আসেন নি। তাই সরকার সূর্যাস্তের পর দুর্গ এবং দুর্গের আশেপাশের বেশ খানিকটা জায়গায় যাওয়া নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।

হাইগেট সমাধিক্ষেত্র, উত্তর লন্ডন, ইংল্যান্ড
রাত হলে এই সমাধিক্ষেত্র কোনো ভূতের মুভির থেকে কম কিছু প্রকাশ করে না। ভূতুড়ে কবরের স্থান, আইভি লতায় জড়ানো মস্তকবিহীন অবয়ব, কবরের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া অন্ধকার গভীর রাস্তায় অদ্ভুত কিছুর আনাগোনা সবই দেখা যায় এই সমাধিক্ষেত্রে। সব চাইতে ভয়ের ব্যাপার হলো এই স্থানের তাপমাত্রা বাইরের যে কোনো স্থানের তুলনায় অস্বাভাবিক ভাবে কম। এই সমাধিক্ষেত্রে কার্ল মার্কসের সমাধি রয়েছে।

প্রাচীন রাম হোটেল, গ্লৌচেস্টারশায়ার, ইংল্যান্ড
যদি ভূতে একেবারেই বিশ্বাস না করেন তবে এই জায়গাটি ঘুরে আসতে পারেন। ক্যাঁচক্যাঁচে শব্দের কাঠের মেঝে, অস্বাভাবিক ঠাণ্ডা, ড্যাম ও টক গন্ধ, অদ্ভুত রকমের ভূতুড়ে আলোর মাঝে নানা আকৃতির আবছা অবয়ব দেখতে পাওয়ার ঘটনার সংখ্যা কম নয়। সব চাইতে বড় কথা হলো এই হোটেলটি একটি সমাধিক্ষেত্রের ওপর তৈরি করা হয়েছিল।

মন্টে ক্রিস্টো, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া
এই বাড়িটি নিউ সাউথ ওয়েলসের জুনে তে অবস্থিত। এই বাড়ির মালিক মিসেস ক্রাওলি তার স্বামীর মৃত্যুর পর ২৩ বছর মাত্র ২ বার বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। এবং মিসেস ক্রাওলির মৃত্যুর পর এই বাড়িটিতে তাকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় আজ পর্যন্ত। এছাড়াও অশরীরী আত্মা, জানালায় অদ্ভুত মুখ, হঠাৎ করেই সামনে চলে আসা ভাসমান অবয়ব, অদ্ভুত ধরনের ভূতুড়ে শব্দ এবং আপনাআপনি লাইট নিভে যাওয়া এবং জ্বলে উঠার মতো ঘটনার শিকার হন যারা এই বাড়িতে গিয়েছিলেন। তারা আরও বলেন যখন তারা ক্রাওলির ঘরে প্রবেশ করেন তখন তারা প্রত্যেকে রূদ্ধশ্বাস ছিলেন এবং রক্তবর্ণে পরিণত হয়েছিলেন যা বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার পর স্বাভাবিক হয়।

এডিনবার্গ দুর্গ, এডিনবার্গ, স্কটল্যান্ড
এই অসাধারণ সুন্দর স্কটিশ দুর্গে ভূত দেখা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে বহুবার। এই দুর্গে বন্দিদের রাখার সেল থেকে প্লেগ রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের সমাহিত করার স্থান পর্যন্ত জায়গায় প্রেতাত্মা কুকুর, একজোন মস্তিষ্কহীন ঢাকি (ড্রাম বাদক) এবং সাত বছর ব্যাপি ফরাসি যুদ্ধ এবং আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নেওয়া বন্দীদের দেখতে পাওয়া এবং আওয়াজ শুনতে পাওয়ার ঘটনা রিপোর্ট করেছেন অনেকেই।

ডোমিনিকান হিল, ব্যাগুও সিটি, ফিলিপাইনস
লোকোমুখে শোনা যুদ্ধের সময় মারা যাওয়া শতশত মানুষের আত্মা এবং আঘাতপ্রাপ্ত মানুষগুলোর বেঁচে থাকার আকুতি এই জায়গাটিকে অভিশপ্ত করেছে। দরজা জানালার হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া, বাসন পত্রের ঝনঝনানি, শত কণ্ঠের আর্তচিৎকার এই সবই শুনতে ও দেখতে পাওয়া যায় রাতের বেলা এই স্থানে।

বেরি পোমেরয় দুর্গ, টোটনেস
চোদ্দশ শতকের এই দুর্গের সাথে অনেক কাহিনী জড়িত রয়েছে। যার মধ্যে আজ পর্যন্ত দুটি নারী অশরীরী অবয়ব হোয়াইট লেডি এবং ব্লু লেডি আজ পর্যন্ত দেখতে পাওয়া যায়। কিংবদন্তী অনুসারে, হোয়াইট লেডি হলেন মার্গারেট পোমেরয়ের আত্মা যিনি বন্দি অবস্থায় অনাহারে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে বন্দি করেছেন তারই হিংসুটে বোন। এই দুর্গের বিভিন্ন জায়গায় আজও তার আত্মাকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। কিন্তু ব্লু লেডির নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। এবং এই অবয়ব সম্পর্কে কারো তেমন কোনো ধারণা নেই।

No comments:

Post a Comment