আজব পৃথিবী

Tuesday, March 25, 2014

ভুতুড়ে এক অবকাশকেন্দ্র!

নির্জন এক সমুদ্রসৈকত। পাশেই সুরম্য ভবনগুলোতে ভরা অবকাশ যাপনকেন্দ্র ‘ভারোশা’। এসব ভবনের কিছু কক্ষ নানা সুন্দর জিনিস দিয়ে সাজানো। সমুদ্র লাগোয়া খোলা বারান্দায় বসার আয়োজন। তবে সবকিছুর ওপর জমেছে ধুলার স্তূপ। বারান্দার চেয়ারগুলো খাঁ খাঁ করছে। কেমন যেন ভুতুড়ে ভাব!দেখে মনে হয়, কোনো জরুরি কাজে এখানকার মানুষ হয়তো কোথাও গেছে, চলে আসবে শিগগিরই। তবে ৪০ বছর ধরে এখানে কেউ আসেনি। নেই প্রাণের স্পন্দন। সাইপ্রাসের ফামাগোস্তার অবকাশকেন্দ্রটির চারপাশে দেওয়া হয়েছে লোহার তারের বেড়া। অযত্নে-অবহেলায় জং ধরেছে সেখানে।কিন্তু কেন এমন ভুতুড়ে হয়ে গেল এই অবকাশ যাপনকেন্দ্রটি? বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭৪ সালে সাইপ্রাস ভাগ হয়ে যাওয়ার আগে ভারোশার ছিল বেশ রমরমা। অসাধারণ কিছু সৈকত ছিল এই দ্বীপের। যিনিই এখানে বেড়াতে আসতেন, রোমাঞ্চ আর প্রেমময় অনুভূতি নিয়ে ফিরে যেতেন। সেই সব গল্প শুনে বড় হয়েছেন সাইপ্রাসের বংশোদ্ভূত মার্কিন-গ্রিক নাগরিক ভাসিয়া মারকিডস।


বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বসবাসরত ভাসিয়া মারকিডস জানালেন, তাঁর মা সব সময় বলতেন শিল্প ও বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থল ছিল এ এলাকাটি। তবে সাইপ্রাসে গ্রিসের সামরিক জান্তার শাসনের কারণে গোষ্ঠীগত দাঙ্গা শুরু হলে তুরস্ক হামলা চালিয়ে ওই দ্বীপের উত্তরাঞ্চলের একাংশ দখল করে নেয়। সেখানকার কিছু কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে লন্ডভন্ড করে ফেলে। তারা অবকাশকেন্দ্রের চারপাশে লোহার বেড়া দিয়ে এটাকে চিরদিনের মতো ভুতুড়ে নগরে পরিণত করে। ১৯৮৪ সালে ভারোশা অবকাশকেন্দ্র জাতিসংঘের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয় এবং কোনো ধরনের পুনর্বসতি স্থাপন বন্ধ করে দেওয়া হয়।এভাবে প্রায় ৩০ বছর পরিত্যক্ত থাকার পর ২০০৩ সালে ওই দ্বীপের কিছু অঞ্চল থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। ‘গ্রিন লাইন’ নামে পরিচিত ওই অংশ প্রথমবারের মতো দেখার সুযোগ পান ভাসিয়া মারকিডস। তখন থেকে তিনি ভাবছেন, এটিকে কীভাবে পরিবেশবান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তোলা যায়। তাঁর মতে, স্বপ্নের প্রকল্পটি হবে স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ অবস্থার অপূর্ব সমন্বয়। গ্রিস ও তুরস্ক তাঁর স্বপ্নের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। এ বছর থেকেই এটিকে পরিবেশবান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু হবে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা এখানকার স্থিতিশীল ভবিষ্যতের জন্য কাজ করবেন। একটি ভুতুড়ে নগর আবার জেগে উঠবে। সেই মুহূর্তগুলো নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র বানাবেন তিনি।

No comments:

Post a Comment