আজব পৃথিবী

Sunday, March 23, 2014

আত্মহত্যার জঙ্গল

জাপানে এমন একটি জঙ্গল রয়েছে যা আত্মহত্যার জঙ্গল নামে খ্যাত। এর নাম অওকিগাহারা। এটি জাপানের ফুজি পর্বতমালার উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত। এর আয়তন ৩৫ বর্গ কিলোমিটার। এটি সি অব ট্রিজ অথবা গাছের সমুদ্র নামেও পরিচিত। কিছু অদ্ভুত পাথর এবং কোনো প্রানের অস্তিত্ব না থাকাতে সব সময় সুনসান নীরব এ বনটি পর্যটকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।জাপানি পুরান মতে, এ বনে প্রেতাত্মারা ঘুরে বেড়ায় এবং এটি আত্মহত্যা করার জায়গা হিসেবে বিবেচিত। এই বন থেকে প্রতি বছর একশোরও বেশি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ২০১০ সালেই ৫৭ টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। যদিও পুরো বন জুড়েই এরকম না করার আহবান জানিয়ে জাপানী ও ইংরেজি ভাষায় সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে।

এই বনটি আত্মহত্যার জন্য পুরো বিশ্বে ২য় ও জাপানে প্রথম জনপ্রিয়তম (!) স্থান। প্রথম স্থানে আছে আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোর গোল্ডেন ব্রিজ। পরিসংখ্যানে ভিন্নতা থাকলেও সব হিসাবই মোটামুটি কাছাকাছি। ১৯৮৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত গড়ে প্রতি বছরই ১০০ জন ব্যক্তি এই বনে এসে আত্মহত্যা করে।২০০২ সালে এই বনে ৭৮ টি মৃতদেহ পাওয়া যায়। এর আগের রেকর্ড ছিল ৭২ টি, ১৯৮৮ সালে। ২০০৩ সালে এই সংখ্যা ১০০ জনে উন্নীত হয়, ২০০৪ এ গিয়ে দাঁড়ায় ১০৮ জনে। এর পর থেকে স্থানীয় প্রশাসন মৃতের সংখ্যা প্রকাশ করা বন্ধ করে দেয়। ২০১০ সালে ২৪৭ জন এই বনে গিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় যাদের মধ্যে ৫৭ জন মারা যায়। এই আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় মার্চ মাসে। এদের বেশিরভাগ হয় ফাঁসিতে ঝুলে কিংবা মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ সেবনে মারা যায়।

১৯৭০ সালে পুলিস, সেচ্ছাসেবক ও সাংবাদিকদের নিয়ে একটি দল গঠন করা হয়েছিল যাদের কাজ ছিল মৃতদেহ গুলো খুজে বের করা এবং লোকজনকে আত্মহত্যায় অনুৎসাহিত করা। এখনো তারা কাজ করে যাচ্ছে এই বিষয়ে।১৯৬০ সালে সেইকো মাটসুমোটো নামক এক জাপানি লেখকের, ”লিট”, “টাওয়ার অফ ওয়েবস” নামের দুটি উপন্যাস প্রকাশের পর থেকেই মানুষের মধ্যে এখানে এসে আত্মহুতির প্রবণতা বেড়ে যায়। এই উপন্যাসের দুটি চরিত্র এই বনে এসে আত্মহত্যা করেছিল। এর পর থেকে জাপানিরা বনে এই আশায় আত্মহুতি দেয় যে পরবর্তিতে তাদের সন্তানেরা ভালোভাবে চলতে পারবে। উনবিংশ শতাব্দীতে এখানে “উবাসুতে” নামে এক অদ্ভুত রীতি পালিত হত। এর মাধ্যমে জাপানীরা তাদের বৃদ্ধ মহিলাদের এই বনে ফেলে যেত যাতে তারা এখানে থেকে মারা যায়। পরবর্তীতে এসব আত্মাদের নাম দেয়া হয় “ইউরেই” বা "রাগী আত্মা"। মানুষ বিশ্বাস করতো এবং এখনো করে এই বনে তারা ঘুরে বেড়ায়।

No comments:

Post a Comment