রাচায়েল মার্টন হাতির বাচ্চাদের মা নন। কিন্তু হাতির বাচ্চাগুলো তা বুঝলে তো! দূর থেকে আসতে দেখলেই হলো। ছোট ছোট শুঁড় নাড়াতে নাড়াতে এসে হাজির। খিদে পেয়েছে, দুধ খাবে। শুঁড় দিয়ে গুঁতিয়ে দেবে, সামনের গোদা পা দুটো একবার তুলবে আবার নামাবে। ছয়টি হাতির বাচ্চার মিলিত ওজন হবে কম পক্ষে ৫শ’ স্টোন। তাতে ঘাবড়ান না রাচায়েল। জানেন ওরা তার কোনো ক্ষতি করবে না। কারণ তিনি ওদের কাছে মায়ের মতো। দুধ খেতে দেনযে!হাতির বাচ্চার মানুষ মা
ছয়টি বাচ্চাই এতিম। মা নেই। গজদন্তের লোভে শিকারিরা মেরে ফেলেছে তাদের। এতে দুধের বাচ্চাগুলো পড়ে গেছে মহাফ্যাসাদে। কে খেতে দেয় তাদের। লতা-পাতা, গাছ-গাছড়া খাওয়ার শক্তি যে এখনও হয়নি তাদের। মায়ের দুধ ছাড়া বাঁচার উপায় নেই। তাই রাচায়েল যখন দুধের ফিডার হাতে এসে দাঁড়ান, দুদ্দাড় করে ছুটে আসে তারা। ছয়জনে মিলে মেতে ওঠে কে কার আগে ফিডার মুখে নিতে পারে সে লড়াইয়ে।কেউ কেউ শুঁড় তুলে ধরে। ৩৩ বছর বয়সী তরুণী মুখ ছুঁয়ে দেন। ঘাবড়ান না রাচায়েল। জানেন যত বড় আর ওজনেরই হোক, হাতির বাচ্চাগুলো এখনও শিশু।শিক্ষাগত দিক দিয়ে বায়োলজিক্যাল গ্রাজুয়েট রাচায়েল। বাড়ি ইংল্যান্ডে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে যুক্তরাজ্য থেকে পাড়ি জমান জিম্বাবুয়েতে। অসহায় হাতির বাচ্চাগুলোকে দেখে মন কেঁদে ওঠে তার। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, তাদের সেবা-শুশ্রূষায় বিলিয়ে দেবেন নিজেকে।
শুধু যে হাতিদের স্বাস্থ্য পরিচর্যায় মনোনিবেশ করলেন, তা নয়। তাদের যে কোনো বিপদ থেকে বাঁচানোর শপথও নিলেন এই ব্রিটিশ তরুণী। তিনি বলেন, ‘আমি ছোট থেকেই জীবজন্তু ভালোবাসি। জিম্বাবুয়ে এসে এদের দেখে এসেক্সের কথা ভুলে যাই। ভুলে যাই আমি যে একজন শ্বেতাঙ্গ মানুষ। হাতির বাচ্চাগুলোর বেঁচে থাকা আমার নিজের বেঁচে থাকার চেয়ে কোনো অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে পারলাম না। তাদের মা হয়ে গেলাম।’২০০৮ সালে একটি বন্যপ্রাণী বিষয়ক সম্মেলনে এসেছিলেন রাচায়েল মার্টন। ফিরে যাননি আর। রয়ে গেছেন। মায়ের আদরে বড় করে তুলছেন মাহারা এতিম হাতির বাচ্চাগুলোকে।
No comments:
Post a Comment