আজব পৃথিবী

Sunday, March 23, 2014

রহস্যময় দ্বীপ

জনবিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ তাও আবার দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে অবস্থিত ।যে দ্বীপের সবচেয়ে কাছের জনবসতির দূরত্ব ৩৮০০ কিলোমিটার । আর তার সবচেয়ে কাছের দেশ হচ্ছে চিলি এবং চিলির উপকুল থেকে এর দূরত্ব ও কাছাকাছি । আর এ দ্বীপটা যেন রহস্যের চাদরে ঘেরা। সমস্ত দ্বীপ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মানুষের মুখের গড়নের নানা আকারের মূর্তি । তাও উনিশ আর বিশ নয় । প্রায় হাজারের কাছাকাছি । বিভিন্ন আকারের মানুষের মূর্তি এবং সব গুলিই পাথরের। হাজার বছর আগের এইসব মূর্তি কোথা হতে আসলো ? কে বা কারা বানিয়েছে তা সঠিকভাবে কোন গবেষকই জানতে বা জানাতে পারে নি।

প্রায় ৩০০ বছর আগে এই রহস্যময় দ্বীপ আবিস্কার হয় ১৭২২ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ই এপ্রিল ডাচ নৌ সেনাপতি জ্যকব রজারভিন এই দ্বীপ আবিস্কার করেন। । সেই দিন উনি জাহাজ থেকে এই দ্বীপটি দেখতে পান। তীরের কাছাকাছি এসে তিনি দেখেন তীরে মানুষের অবয়বে প্রচুর মূর্তি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কুলে নেমে এসে লক্ষ্য করেন সমস্ত দ্বীপ জুড়েই এমন শত শত মূর্তি ছড়িয়ে আছে ।তিনি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান। সেই দিনটি ছিল খ্রিস্টানদের বিশেষ ধর্মীয় দিন ইস্টার সানডে। আর সেই দিনের নামেই তিনি দ্বীপটির নাম রাখেন ইস্টার আইল্যান্ড ।এই দ্বীপটি ত্রিকোণ আকৃতির আগ্নেয় শিলা দিয়ে তৈরি। এর আয়তন লম্বায় ২৮.৬ কিলোমিটার, চওড়ায় ১২.৩ কিলোমিটার ।দ্বীপটিতে তখন আদিবাসিদের বসবাস ছিল। কিন্তু গবেষণা করে দেখা গেছে তাদের কারু পক্ষেই এমন বিশাল আকৃতির পাথরের মূর্তি বানানো সম্ভব না। মূর্তি গুলো অনেক রকমের আকৃতির ৩ ফুট থেকে প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার ।একেকটার ওজন কয়েক টন পর্যন্ত ।সব মূর্তিগুলিই নিরেট কালো আর লালচে পাথরে খোদাই করে তৈরি করা ।এ দ্বীপটি নিয়ে অনেক রকম গল্প প্রচলিত কারো কারো ধারনা ভিন্ন গ্রহ থেকে অথবা সেখানে কোন সভ্য জাতির অস্তিত্ব ছিলো ।আর তাদের হাতেই তৈরি হয়েছে মূর্তিগুলি । তারা হয়ত কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে । ডাচ নৌ সেনাপতি জ্যাকব রজারভিন এই দ্বীপটি আবিস্কারের পর ধারনা করেন যে সামুদ্রিক ঝিনুকের খোলের চূর্ণের সাথে এক ধরনের বিশেষ কাদার প্রলেপ দিয়ে মূর্তি গুলি তৈরি করা হয়েছে ।কিন্তু পরবর্তীতে তার ধারনা ভুল প্রমানিত হয়।

বর্তমানের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে এটা নিশ্চিত হয়েছে এই মূর্তি গুলির উপাদানের সাথে এবং গঠন শিল্পের সাথে মিসরের পিরামিড এর উদ্ভূত মিল আছে। প্রায় ৭ হাজার বছর আগের তৈরি পিরামিডের গঠন এবং উপাদানের মিল কি করে এমন দূরবর্তী দ্বীপের মূর্তি গুলির সাথে হল সেটা সত্যি প্রকৃতির এক বিচিত্র বিচরণ ।মূর্তি গুলির আরও একটি বৈশিষ্ট হচ্ছে প্রায় মূর্তি ই সমুদ্রের দিকে মুখ করে। স্থানীয় আদিবাসীদের ধারনা এই মূর্তি গুলির মধ্যে পবিত্র আত্না বাস করে । যা তাদের ভাগ্য নির্ধারক হিসাবে কাজ করে । স্থানীয় আদিবাসীদের ভাষায় দ্বীপটিকে বলা হয় " টিপিটোওটি হিনুয়া " । যার মানে দাঁড়ায় পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল ।আর মূর্তি গুলি কে "মোয়াই " নামে ডাকা হয় । বর্তমানে দ্বীপটিতে পর্যটকদের আগমন প্রচণ্ড রকম বেড়ে গেছে ।ইউরোপ আমেরিকা অনেক দেশ থেকে এখানে পর্যটকদের জন্য ভ্রমণের ব্যবস্থা করেছে ।যার ফলে দ্বীপটিতে পর্যটকদের ব্যাপক আগমন ঘটছে । আর সেই সাথে স্থানীয় আদিবাসিদের জনসংখ্যা ও বাড়ছে দ্বীপটির ঐতিহ্য বাড়ার জন্য ইউনেস্কো দ্বীপটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

No comments:

Post a Comment