আজব পৃথিবী

Wednesday, March 26, 2014

মেরু ভালুকের শীতনিদ্রা লাগে না

দেহে শক্তি সঞ্চয় করে রাখতে এবং দেহকে উষ্ণ রাখতে বাদামি ও কালো রঙের ভালুক শীতনিদ্রা যায়। কিন্তু বরফের মধ্যে থেকে একই কাজের জন্য মেরু ভালুককে শীতনিদ্রা যেতে হয় না। শুধু গর্ভবতী মেরু ভালুক স্বল্প সময়ের জন্য গর্তে ঢোকে। কিন্তু শীতনিদ্রা যায় না। গবেষকদের কাছে একটা বড় মাপের প্রশ্ন ছিল, কেন মেরু ভালুককে শীতনিদ্রা যেতে হয় না। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, মেরু ভালুকের জেনোমের ভিতর জিন নিয়ন্ত্রণকারী নাইট্রিক অক্সাইড রয়েছে, যা বাদামি বা কালো রঙের ভালুকের দেহে নেই। এ কারণে কালো বা বাদামি রঙের ভালুককে শীতনিদ্রা যেতে হলেও মেরু ভালুককে যেতে হয় না।

নতুন এ গবেষণায় নেতৃত্ব দেন যুক্তরাষ্ট্রের বাফেলো ইউনিভার্সিটির বায়োলজিক্যাল সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শার্লোট লিন্ডভিস্ট। তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক আবহাওয়ায় পরিবর্তন এখন অতি বাস্তব ব্যাপার। বলা হচ্ছে বিশ্বের অনেক নিচু এলাকা সাগরের পানিতে তলিয়ে যাবে। তাই উঁচু এলাকার প্রাণিকুলে কোন ধরনের অভিযোজন ক্ষমতা সৃষ্টি হচ্ছে, তা অনেক গবেষক এখন বিবেচনায় রাখছেন। আমাদের নতুন এ গবেষণার ফল অভিযোজন সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণার একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। জিনগত কারণে যেসব প্রাণীর দেহে নাইট্রাস অক্সাইডের উত্পাদন বেশি হয়, তাদেরই অভিযোজন ক্ষমতা বেশি। এ কারণে মেরু ভালুককে শীতনিদ্রায় যাওয়া লাগে না।’
গবেষকরা বলেন, জিনগত দিক থেকে অভিযোজন বা টিকে থাকার ক্ষমতা যার বেশি, আবহাওয়াগত পরিবর্তন সূচিত হলে তারই টিকে থাকার ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি হবে।

গবেষকরা বলেন, যুদ্ধ করে বাঁচার নাম অ্যাডাপ্টেশন বা অভিযোজন। অনেক প্রাণী শীতের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে। প্রাকৃতিকভাবে যুদ্ধ করার মতো দৈহিক অবস্থা এদের আছে। এদের দেহে চামড়ার নিচে চর্বির অনেক মোটা স্তর থাকায় এরা সহজে শীতে কাবু হয় না। চর্বির এই স্তরকে বলে ব্লাবার। এই ব্লাবার তাদের দেহকে শীতেও গরম রাখে। এসব প্রাণীর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মেরু ভালুক, সিল এবং তিমি। তাছাড়া দেহে অনেক ঘন লোমও এদের শীতের হাত থেকে বাঁচায়। এসব প্রাণীর কারো কারো দেহের এক ইঞ্চি জায়গায় গড়ে এক মিলিয়ন লোম থাকে। মানুষের মাথায় গড়ে এক মিলিয়ন করে চুল বা লোম থাকে। তাছাড়া অন্য এলাকার প্রাণীদের চেয়ে শীতপ্রধান অঞ্চলের প্রাণীদের দেহ গঠনেও অনেক পার্থক্য আছে। যেমন মেরু শেয়াল। এদের দেহ অন্য এলাকার শেয়ালের চেয়ে একটু গোলগাল ও স্থূলাকার। এ ধরনের দেহ তাপমাত্রা সঞ্চয় করে রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া এদের নাকমুখ একটু ছোটখাটো এবং কানটাও ছোট ও গোলাকৃতির। এসব বৈশিষ্ট্যের কারণে তাদের দেহ থেকে তাপ বের হয় কম।

No comments:

Post a Comment